বিশ্বাস
ঈমানদারগণ আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় বিশ্বাসী। মানুষ সীমাবদ্ধ, তার ধ্যান-ধারণাও সীমাবদ্ধ। আল্লাহর অসীম ক্ষমতা সম্বন্ধে সে আর কতটুকু জ্ঞান রাখে? তবে আমরা এতটুকু বিশ্বাস রাখি যে, আল্লাহ যখন যা ইচ্ছা করেন তখনই তিনি তা করতে সক্ষম। কিন্তু বাস্তবিকই কি আল্লাহর এই অসীম ক্ষমতা সম্বন্ধে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আছে? কার্যক্ষেত্রে কি আমরা আমাদের বিশ্বাস প্রমাণ করতে পারব?
অতীতকালের অনেক অসম্ভব সম্ভব হয়েছে বলে আমরা যেরূপ বিশ্বাস রাখি, ভবিষ্যতেও তেমনি অনেক অসম্ভব সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস রাখি। এখন সমস্যা হলো কেবল বর্তমানকে নিয়ে। বর্তমানেও যে কোন অসম্ভব সম্ভব হতে পারে, এ কথা আমরা কোন মতেই বিশ্বাস করতে চাইনে। এরূপ কোন বর্ণনা শুনলেই আমাদের চোখ কপালে উঠে, এক বাক্যে তা সম্পূর্ণ অসম্ভব বলে উড়িয়ে দিই।
এ সম্বন্ধে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি আহ্বায়ক সমিতির সভাপতি হযরত মোঃ বরকত উল্লাহ খান একটা নকল বর্ণনা করে থাকেন। তা এরূপ ঃ
একবার বাপ-বেটা দুই জন কাঠ কাটতে গহীন অরণ্যের ভেতর যায়। বনের মধ্যে তারা উভয়েই একটা অসম্ভব ঘটনা ঘটতে দেখে অত্যন্ত আশ্চার্যান্বিত হয়ে পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে থাকে। শেষে ছেলেটি বাপকে বলল, বাবা এটা কি করে সম্ভব হল?
বাবা ছিল বুদ্ধিমান। সে ছেলেকে বলল, ‘বাবা, যা দেখবার দেখছো। এ ঘটনার কথা আর কাউকে বলো না।’
তারপর বেশ কিছুদিন গত হয়ে গেল। কিন্তু যুবক ছেলে, কোন মতেই প্রত্যক্ষভাবে দেখা ঘটনাটি ভুলতে পারল না। তা প্রকাশ করার জন্য মন কেবলই ইতি-উতি করছিল। বাবা সাবধান করে দেয়ায় কারো কাছে বলতেও সে সাহস পাচ্ছিল না। তার কথা বিশ্বাস করতে পারে এমন কাউকে সে খুঁজেও পাচ্ছিল না। শেষে সে তার আবাল্য এক বিশ্বস্ত বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুর কাছেই ঘটনাটি পেশ করার মতলবে বলল, বন্ধু, আমি একটি কথা বলতে চাচ্ছি আপনি কি তা বিশ্বাস করবেন?
বন্ধু বলল, আমি কবে আপনার কথা অবিশ্বাস করেছি?
তখন সে বলল, কথা তা নয়। বিশ্বস্ত হিসেবেই আপনার কাছে বলতে চাচ্ছি। তবুও আমাকে কতটুকু বিশ্বাস করেন, কেবল তা-ই আপনার মুখ থেকে জানতে চাই।
বন্ধুটি তাকে অভয় দিলে চোখে দেখা ঘটনাটি সে বর্ণনা করল। বর্ণনা শুনা মাত্রই বন্ধুটি চোখ পাকিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শেষে বলল, দোস্ত! আমার মনে হচ্ছে আপনার মাথা ঠিক নেই। মাথা ঠিক থাকলে কখনো এমন কথা বলতে পারতেন না।
এতে বন্ধুটি খুবই আহত হল। তারপর ঘটনাটি তাকে বুঝাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করল। কিন্তু কোন মতেই বন্ধুটিকে তা আর বিশ্বাস করাতে পারল না। মরিয়া হয়ে শেষে বলল, আচ্ছা দোস্ত, এ ঘটনা সম্বন্ধে যদি আমার বাবা সাক্ষ্য দেন তা হলেও কি আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না?
তখন দ্বিতীয় বন্ধু বলল, তালুইজি (বন্ধুর পিতা) কখনো এমন ঘটনা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিতে পারেন না।
প্রথম বন্ধু – যদি বাবা সাক্ষ্য দেন?
দ্বিতীয় বন্ধু – আমার বিশ্বাস তালুইজি কখনো এমন পাগলের কথায় সাক্ষ্য দিবেন না।
প্রথম বন্ধু – ধরুণ, যদি তিনি সাক্ষ্য দেনই?
দ্বিতীয় বন্ধু – হ্যাঁ, তালুইজি সাক্ষ্য দিলে বিশ্বাস করা যেতে পারে। তবে তালুইজিকে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে আপনাকে পাঁচ শ’ টাকার বাজী রাখতে হবে। তালুইজি এ ঘটনার সত্যতা সম্বন্ধে অস্বীকার করলে আমাকে আপনার পাঁচশ’ টাকা দিতে হবে। আর যদি তিনি স্বীকার করেন, তাহলে আপনাকে আমার দিতে হবে পাঁচশ’ টাকা।
প্রথম বন্ধুটি এতে রাজী হল। তার নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল, বাবা নিশ্চয়ই প্রত্যক্ষভাবে দেখা ঘটনার সাক্ষ্য না দিয়ে পারবেন না। তারপর দুই দোস্ত তালুইজির কাছে যেয়ে হাজির হলো। দ্বিতীয় দোস্তটি তখন তালুইজিকে লক্ষ্য করে বলল, তালুইজি! আমার দোস্ত আমাকে অসম্ভব একটা ঘটনার কথা বলেছে।
তালুইজি পুত্রাকে (ছেলের দোস্তকে) বলল, কি কথা?
পুত্রা বলল, “দোস্তজী বলেছে, কোন এক অরণ্যে কাঠ কাটতে যেয়ে নাকি সে দেখেছে যে একটা ব্যাঙ একটা হাতী গিলে ফেলেছে।”
তখন তালুইজি পুত্রাকে বলল, তোমার কি বিশ্বাস? পুত্রা বলল, এমন কথা পাগল ছাড়া আর কে বলতে পারে? এমন কথা আমি কখনো বিশ্বাস করতে পারি না।
তালুইজি বলল, তুমি যদি বিশ্বাস করতে না পার, তা হলে কিভাবে আর তা হতে পারে?
পুত্রা বলল- কিন্তু দোস্তজী যে আপনাকে এ ঘটনার সাক্ষী মানছে?
তালুইজি বলল- বাপু! যা বিশ্বাসযোগ্য নয় তেমন কথায় আমি আর কিভাবে সাক্ষ্য দিতে পারি?
তখন পুত্রা তার বন্ধুটিকে লক্ষ্য করে বলল, কেমন, আমি বলেছিলাম না যে তালুইজি কখনো এমন কথা বলতে পারেন না? এবার হলো ত?
পুত্রাটি এবার তালুইজিকে লক্ষ্য করে বলল, দোস্তজী যে পাঁচশ টাকার বাজী রেখেছে?
তালুইজি ছেলেকে বলল, তোমার দোস্তকে পাঁচশ টাকা দিয়ে দাও।
দ্বিতীয় দোস্ত প্রথম দোস্তকে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করে হাসতে হাসতে বাজীর পাঁচশ টাকা নিয়ে চলে গেল।
দোস্ত চলে যাওয়ার পর ছেলে বাপকে বলল, বাবা আপনি এ সত্য ঘটনার সাক্ষ্য দিলেন না কেন?
বাপ বলল, বাবা, তুমি একা পাগল হয়েছ এই ত যথেষ্ট! তোমার সঙ্গে সাক্ষ্য দিলে তাদের কাছে আমিও ত পাগল হয়ে যেতাম। অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিলেও সে বিশ্বাস করতে পারত না।
বাপ ছিল খুবই বুদ্ধিমান। পুত্রাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য বাপ নানা ভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগল। এরই মধ্যে তাদের একটা গাভী বাচ্চা দিল। গোয়াল ঘরের পাশেই ছিল একটা পুকুর। বাপ প্রত্যেক দিনই সকালে গাভী দোহনের পূর্বে বাছুরটিকে পুকুর থেকে একটা চুবানী দিয়ে আনতো। কিছু দিন এরূপ করার পর এমন অভ্যাস হয়ে গেল যে, গাভী দোহনের পূর্বে ছেড়ে দিলে বাছুরটি প্রথমে গাভীর দিকে না যেয়ে স্বেচ্ছায় পুকুরে যেয়ে একটা ডুব দিয়ে তারপর গাভীর কাছে এসে দুধ খায়। যখন এই অভ্যাস পাকা-পোক্ত হয়ে গেল, তখন বাপ ছেলেকে বলল, বাবা, তুমি এবার তোমার দোস্তকে যেয়ে বলো, ‘দোস্ত আমাদের গাভীটি একটি বাছুর দিয়েছে যে, সে সকালে গোছল না করে দুধ মুখে দেয় না।’ এবার ছেলেটি ঠিক পূর্বের মতই দোস্তের বাড়িতে বেড়াতে যেয়ে এ কথা-সেকথা বলার পর বাপের কথা মত আসল কথাটি বলল। দোস্ত এবারও হাসি-ঠাট্টা করে দোস্তের কথা উড়িয়ে দিল। দোস্ত যে আস্ত পাগল হয়ে গেছে এ বিষয়ে তার আর কোন সন্দেহ রইল না। শেষ পর্যন্ত এক হাজার টাকার বাজী রেখে অদ্ভুত বাছুরটিকে দেখার জন্য দোস্তের বাড়িতে গেল। দোস্ত যেয়েই প্রথমে তালুইজির কাছে দোস্তের পাগলামীর কথা বলল। তালুইজিও পুত্রার কথায় সায় দিয়ে রাত্রিটা কাটিয়ে সকাল পর্যন্ত থাকার কথা বলল। দোস্তটি হাজার টাকার বাজী জিতবার আশায় মহানন্দে রাত্রিটা কাটাল। সকাল বেলায় ঘুম থেকে যখন জাগল, তখন তালুই পুত্রাকে ডেকে গোয়াল ঘরে নিয়ে গেল। তারপর পুত্রাকে বলল, “বাবা, এই হল গাভী।” একটু দূরে রশি দিয়ে বাঁধা বাছুরটিকে দেখিয়ে বলল, “আর এটা হল ঐ গাভীর বাছুর। তুমি এখন নিজ হাতেই বাছুরটিকে ছেড়ে দাও।”
দোস্ত দেখল ছাড়া পাওয়া মাত্রই বাছুরটি গাভীর দিকে না ছুটে ছুটল পুকুরের দিকে। পুকুরে নেমে নিজে নিজেই পুকুরে একটা ডুব দিয়ে উঠে গাভীর কাছে যেয়ে দুধ খেতে লাগল। দোস্ত অবাক হয়ে এ দৃশ্য দেখল। তখন তালুইজি পুত্রাকে বলল, “দোস্তের কথা কি এখন বিশ্বাস হয়? স্বচক্ষে এমন ঘটনা দেখার পর সে আর কিভাবে অবিশ্বাস করতে পারে! তখন সে বলল, “এটা আর কি ভাবে অবিশ্বাস করা যায়?”
তখন তালুইজি বলল, তুমি না আমার ছেলের আবাল্য বিশ্বস্ত বন্ধু! তুমি না তাকে ছোট কাল থেকে দেখে আসছ? তাকে কি তুমি কখনো গাল-গল্প করা লোকের মত মনে করেছ? যাকে তুমি এতকাল ধরে দেখে আসছ, কোন সময় যাকে মিথ্যা গাল-গল্প করতে দেখনি, যার চরিত্র ও বুদ্ধিমত্তা সম্বন্ধে কোন সময় কোন সন্দেহ করতে পারনি, তেমন লোক একটা কথা বলল আর তুমি সে কথাটা এমনিতেই অবিশ্বাস্য বলে উড়িয়ে দিলে? বন্ধুর কোন কথা যদি বন্ধু বিশ্বাস করতে না পারে সেখানে কি বন্ধুত্ব থাকতে পারে? তুমি যখন তোমার বন্ধুর কথা অবিশ্বাস করেছ, এমন অবিশ্বাসীর সঙ্গে তার আর কোন বন্ধুত্ব থাকতে পারে না। সুতরাং এ মুহূর্তে তুমি এখান থেকে দূর হয়ে যাও।
বন্ধুটি মুখ কাল করে লজ্জিত ও অপমানিত হয়ে চলে গেল।
হযরত রাছুলে করিম (দঃ) যখন বললেন, সারা জাহানের মঙ্গলের জন্যই আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন, তখন বিশ্ববাসী তার এই কথাকে কোন্ নজরে দেখেছিল? ব্যাঙের হাতী গেলা নয় কি? এক দিকে অর্ধেক বিশ্বের অধিশ্বর পারস্য-রাজ খশরু পারভেজ, অন্য দিকে অপর অর্ধেক বিশ্বের অধিশ্বর রোমের বাদশাহ কিসরা, আরও কত রাজা মহারাজা রাজত্ব করছেন। তারা বিশ্বের শান্তির জন্য কিছু করতে পারছেন না। অথচ ধন-জন-মানহীন নিরক্ষর মোহাম্মদ দাবী করছে যে, তাঁর কথা মান্য করলেই দুনিয়ার শান্তি নেমে আসবে। সে-ই নাকি দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র চাবি-কাঠি! ব্যাঙের পক্ষে হাতী গেলাও সম্ভব, কিন্তু মোহাম্মদের পক্ষে এরূপ দাবী করা যে ব্যাঙের হাতী গেলার চাইতেও অসম্ভব!
এমন একদিন ছিল হযরত মোহাম্মদ (দঃ) তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে লোকের দ্বারে দ্বারে ফিরেছেন, আল্লাহর অসীম ক্ষমতার কথা লোকদের শুনিয়েছেন। কিন্তু সর্বত্রই তিনি মিথ্যাবাদী-পাগল রূপে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। এক অসম্ভব উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার ফাঁদে পড়ে ঘুর-পাক খাওয়ার অপবাদ লাভ করেছেন। একদিন যারা তাঁকে ‘আলামিন’ সত্যবাদী বলে জানত, তারাই আজ তাঁর মুখে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা শুনে মিথ্যা কল্পনাভিলাষী বলে দোষারোপ করতে কসুর করল না। তাঁর পরিকল্পনার কথা শুনে বন্ধু শত্রু হয়ে গেল। সেদিন অতীত হয়ে গেছে। অবজ্ঞাত, অখ্যাত, ধন-জন-নামহীন নিরক্ষর মোহাম্মদ (দঃ) আজ সত্য সত্যই “রাহমাতুল্লিল আলামিন”, “বিশ্বের রহমত” হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। কিন্তু এই মোহাম্মদ (দঃ) এর কথাই একদিন ব্যাঙের হাতী গেলার মত অবিশ্বাস্য ছিল।
সে যাহোক, আজ বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি আহ্বায়ক সমিতির সভাপতি – বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে লোকের দ্বারে দ্বারে ফিরছেন, দেশি-বিদেশি রাজা-মহারাজাদের কাছে দূত মারফত তাঁর পরিকল্পনা তিনি পেশ করছেন। কিন্তু যেখানেই তিনি যান সেখানেই ব্যাঙের হাতী গেলার মতই তাঁর পরিকল্পনাটিকে অসম্ভব কল্পনাভিলাষ বলে উড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তাঁরা না হযরত মোহাম্মদ (দঃ) -এর উম্মত বলে দাবী করছে? এবং আল্লাহকে অসীম ক্ষমতাময় বলে বিশ্বাস করছে? যোগাযোগের সরঞ্জাম বিহীন এক দূর অতীতের এক ব্যক্তিকে যদি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী বলে স্বীকৃতি দেয়া অসম্ভব কিছু না হয়ে থাকে, তা হলে যোগাযোগের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি পুরাপুরি হস্তগত হওয়ার পরও বর্তমান বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার এ পরিকল্পনাটিকে বাস্তবায়িত করা কি আল্লাহর পক্ষে অসম্ভব কিছু হয়ে পড়ল? বর্তমান পরিকল্পনাকারী একজন অজ্ঞাত-অখ্যাত ধন-জন-মানহীন প্রায়-নিরক্ষর বলেই কি তাঁর পরিকল্পনা ব্যাঙের হাতী গেলার মত অসম্ভব হয়ে পড়ল? আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় যারা অবিশ্বাসী তারা ছাড়া আর কে এ পরিকল্পনাটিকে হাস্য-বিদ্রƒপ করে উড়িয়ে দিতে পারে?
আল্লাহর ‘কুদরতে’ অতীতে অনেক অসম্ভব সম্ভব হওয়ার কাহিনী বিশ্বাস করতে আমাদের বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না, আল্লাহর কুদরতে ভবিষ্যতেও অনেক অসম্ভব সম্ভব হবে বলে আমরা অতি সহজে বিশ্বাস করতে পারি। কিন্তু সকল প্রকার দার্শনিক, মানবিক ও শাস্ত্রীয় যুক্তি এবং অত্যাধুনিক সাজ-সরঞ্জাম দ্বারা সমর্থিত, সকলের দীর্ঘ দিনের ঈপ্সিত ও আকাক্সিক্ষত একটি বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এবং এই লক্ষ্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কাঠামোগত প্রাথমিক কাজ অনেক দূর সম্পন্ন করার পরও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার বাকী কিছু সাংবিধানিক কাজ আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতায় সম্পন্ন করার পরিকল্পনাটাকে সম্পূর্ণভাবে অসম্ভব বলে যারা এক বাক্যে উড়িয়ে দিচ্ছেন তারা কি সত্য সত্যই অসীম ক্ষমতাময় আল্লাহর বাস্তব বর্তমানে বিশ্বাসী?
আমি এক অতি নগণ্য বান্দা। জ্ঞান-ধ্যান, এলেম-কালাম বলতে গেলে কিছু মাত্র নেই। ধর্ম সম্বন্ধেও আমার জ্ঞান অতি সীমাবদ্ধ। অতি সাধারণ লোক হিসেবে মহান আল্লাহ আমাকে যে সাধারণ জ্ঞানটুকু দান করেছেন তাতে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি আহ্বায়ক সমিতি কর্তৃক প্রচারিত বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাটিকে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান-বুদ্ধিতে কোন মতেই অযৌক্তিক, অদার্শনিক বা অশাস্ত্রীয় প্রমাণ করতে পারছি না। যদিও এর বাস্তবায়নের পথটি অত্যন্ত জটিল ও সঙ্কটাকীর্ণ এবং কঠোর বাধা বিপত্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছি। কিন্তু অতীত ইতিহাস এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু বুঝেছি এবং যা দেখে আসছি তাতে বিনা দ্বিধায় বলতে পারি যে, ঝড়-ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ সমুদ্র পাড়ি না দিয়ে যেমন কেউ সুদক্ষ নাবিক বলে পরিচিত হতে পারেননি, ঝড়-ঝঞ্জা-বিক্ষুব্ধ এই ভব সাগর পাড়ি না দিয়ে কেউ মহত ও হতে পারেন নি। আর মহান আল্লাহর মহা জ্যোতি যাকে পথ দেখায় জাগতিক কোন বাঁধা তার পথ রোধ করতে পারে বলে আমার জানা নেই। অবিশ্বাসীরা মহান আল্লাহর নূরকে মুখের এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেবার যত চেষ্টাই করুক না কেন অবিশ্বাসীদের ইচ্ছা কখনো পূর্ণ হবার নয়। অর্থাৎ সমস্ত বিরুদ্ধবাদীদের চেষ্টা বিফল করে দিয়ে আল্লাহ তার স্বীয় জ্যোতি উদ্ভাসিত করবেনই। এটাইত আল্লাহর বিধান বা নিয়ম। আল্লাহর এই বিধান বা নিয়ম প্রতিষ্ঠাকে কি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে?
বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি আহ্বায়ক সমিতি কর্তৃক প্রচারিত বিশ্ব শান্তির পরিকল্পনাটির পিছনে আল্লাহর এই নূরকেই যেন প্রত্যক্ষ করছি।
এখন যদি কোন ভাই এই পরিকল্পনাটির উর্ধ্বে বা বিরুদ্ধে আল্লাহর কোন নূর দেখাতে পারেন, তাহলে অবশ্যই তা বিচার বিবেচনা যোগ্য। কিন্তু যদি এর বিরুদ্ধে বা এর ঊর্ধ্বে কোন জ্যোতি না দেখিয়ে কেবলমাত্র “ইসলাম গেল, ধর্ম গেল, কাফের বেদ্বীন হল” বলে সোরগোল করতে থাকে তখন এই সোরগোলকারীদেরকে সমর্থন করাই কি “ইসলাম” বা “ধর্ম” হবে বা এটাই কি যুক্তিসঙ্গত হবে?
যুক্তি বা শাস্ত্রীয় বাণীর সমর্থন বিহীন সোরগোলকে আমি কখনো ইসলাম বা ধর্ম বলে মেনে নিতে বা এরূপ সোরগোলের দ্বারা আত্মার মুক্তি হতে পারে বলেও বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার বিশ্বাস, অসীম আল্লাহকে কেউ শক্তির বলে, অর্থের বলে বা অশ্রুপাত করে পেতে পারে না। তবে আল্লাহ স্বীয় রহমতে স্বেচ্ছায় যাকে ধরা দেন, কেবল সে-ই আল্লাহকে পেতে পারে। স্বীয় রহমতে স্বেচ্ছায় আল্লাহ যাকে ধরা দেন তিনিই হচ্ছেন আল্লাহর অনুগৃহীত মনোনীত ব্যক্তি। এরূপ ভাবে মনোনীত ব্যক্তিই হচ্ছেন পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার কেন্দ্র বিন্দু এবং পরকালে মুক্তির দিশারী। এই মনোনীত ব্যক্তির সাথে ঐকমত্য ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলাই হচ্ছে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায়।
যারা ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি লাভের জন্য এই মনোনীত ব্যক্তির সাথে ঐক্যবদ্ধ ও ঐকমত্য হয়, তাদেরকে ধর্মদ্রোহী, ইসলাম বিরোধী বলে আখ্যায়িত করার কোন যুক্তি, দলিল প্রমাণ কি কেউ দেখাতে পারেন? যদি কেউ এর বিরুদ্ধে কোন যুক্তি বা দলিল প্রমাণ দেখাতে না পারেন, তা হলে যুক্তিসিদ্ধ ও সর্বমঙ্গলজনক একটি পরিকল্পনা তা যতই সমস্যা ও সঙ্কটপূর্ণ এবং ব্যাঙের হাতী গেলার মত অসম্ভব প্রতীয়মান হোক না কেন মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়া অতি সহজেই সম্ভবপর বলে আমার বিশ্বাস।
মহান আল্লাহ এই নগণ্য গোনাহগারকে তাঁর অনুগৃহীত ব্যক্তির সঙ্গেই হাশর ও নশর প্রদান করুন। আমিন!
অ আখেরে দাওয়ানা আনেল হামদু লিল্লাহে রাব্বিল আলামিন।