ঈমান

ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আক্বিদা বা এক্বীন – যার অর্থ ঈমান বা বিশ্বাস। প্রতিটি মুসলমান ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করার ইচ্ছা পোষণ করে। তাই প্রথমে জানা দরকার ঈমান কি?

আল্লাহপাক হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে উদ্দেশ্য করে পাক কালাম কোরআন শরীফের ৪২ নম্বর সুরার ৫২ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “কিতাব কি আপনি চিনতেন না এবং ঈমান কি তা আপনি জানতেন না।” হযরত মোহাম্মদ (সঃ) নবুয়ত পূর্ব চল্লিশ বছরের জিন্দেগীতে অত্যন্ত ধর্মপরায়ন, বিশ্বাসী, সত্যবাদী, চরিত্রবান ও বুদ্ধিমান লোক হিসাবে সমাজে পরিচিত ও সমাদৃত ছিলেন। প্রতিটি ধর্মপরায়ণ লোকের মতো তাঁরও ঈমান থাকার কথা। নিশ্চয়ই তিনি জানতেন একজন সৃষ্টিকর্তা ‘আল্লাহ’ আছেন; ইব্রাহীম (আঃ), মুসা (আঃ), ঈসা (আঃ) এঁরা আল্লাহর রাসুল, তাওরাত ও ইঞ্জিল আল্লাহর পাক কালাম অর্থাৎ কিতাব। তিনি আরও জানতেন মানুষ মরণশীল। মরনের পর আরেকটি জগৎ আছে। সে জগতে বিশ্বাসীদের জন্য বেহেস্ত এবং অবিশ্বাসীদের জন্য দোযখ রয়েছে। এসব বিশ্বাস্য বিষয়গুলো জানার পাও হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে আল্লাহপাক স্পষ্টভাবে বলেছেন, “ ঈমান কি আপনি জানতেন না।” তা’হলে দেখা যাচ্ছে, মানুষের মুখে শুনে বা কিতাব পাঠ করে উক্ত বিশ্বাস্য বিষয়গুলো মুখে আওরালে বা মেনে নিলেই ঈমান লাভ হয় না বা ঈমান হাসেল হয়েছে বলে দাবী করা যায় না। ঈমান হচ্ছে আল্লাপাকের এক বিশেষ অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা ঈমান দান করেন। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) নবুয়তপূর্ব জীবনে লোক মুখে শুনে বা পৈত্রিক সূত্রে লব্ধ ধর্মীয় জ্ঞানে যে ঈমান লাভ করেছিলেন তা প্রকৃত পক্ষে সত্যিকার ঈমান ছিল না; বরং নবুয়ত প্রাপ্তির পর আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে আল্লাপাকের অপরিসীম দয়ায় এক দৃঢ় ঈমান লাভ করেন। তাঁর ঈমানের সঙ্গে সাধারণ লোকের ঈমানের কোন তুলনাই হতে পারে না। এই শ্রেণীর দৃঢ় ঈমানকেই বলে হাক্কুল এক্বীন। আক্বিদার দিক দিয়ে প্রত্যেক নবী-রসুলই হচ্ছেন হাক্কুল এক্বীনদার। এই হাক্কুল এক্বীন হচ্ছে সর্ব্বোচ্চস্তরের ঈমান।

সাধারণ মানুষ বা বান্দাদের মধ্যে যারা নবী-রসুলদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে যে ঈমান লাভ করেন তা হচ্ছে আইনুল এক্বীন। এরাই নবী-রসুলদের প্রদর্শিত পথে চলে হ’ন সফলকাম। আল্লাহপাক নবী-রসুলদের উছিলায় এসব বান্দাদের এমন নূর দান করেন যাতে আল্লাহর প্রতি তাঁদের বিশ্বাস হয়ে থাকে খুবই দৃঢ় ও শক্তিশালী। তাই আল্লাহর পথে জীবন বিসর্জন দিতে তারা কখনো দ্বিধাবোধ করে না। এই শ্রেণীর ঈমানদাররাই হচ্ছেন সত্যিকার অর্থে আইনুল এক্বীনের অধিকারী।

আইনুল এক্বীনদার কখনো মানুষের মুখে শুনে বা কারো দেখাদেখি সামাজিকতা হিসাবে ধর্ম পালন করেন না; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য সাক্ষাৎ রাসুল কর্তৃক প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে ধর্ম পালন করে থাকেন। হাক্কুল এক্বীনদার ও আইনুল এক্বীনদার উভয়েরই পরকালে মুক্তির ব্যাপারে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ থাকে না। যেমন, হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ও তাঁর সাহাবাগণের পরকালের মুক্তি সুনিশ্চিত। প্রত্যেক নবী-রসুল ও তাঁদের সাহাবাগণের ক্ষেত্রে উক্ত ব্যাপারটি সমভাবে প্রযোজ্য।

এক্বীন বা ঈমানের আরো একটি স্তর রয়েছে; তাকে বলে এলমুল এক্বীন। এই শ্রেণীর এক্বীনদার সম্পর্কে আল্লাহপাক ঘোষণা দিয়েছেন “মানুষদের মধ্যে কতক মানুষ আছে, যারা বলে, আমরা ঈমান আনলাম আল্লাহর প্রতি আর ঈমান আনলাম পরকালের ওপর; তারা ঈমানদার নয়” (কোরআন ২ঃ৮)। এলমুল এক্বীন হাসিলের উৎস হচ্ছে পিতা-মাতা বা সামাজিক পরিবেশ। সে যে সমাজে বা গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেছে, সে সেই সমাজের বা গোত্রের প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই পৈত্রিক ধর্ম পালন করে থাকে। এরূপ ধর্মের অসারতা অনুধাবন করে সঠিক ধর্মের সন্ধান করার প্রয়াস তারা মোটেই পায়না। ধর্মীয় বিধি-বিধান তাদের নিকট সমাজের রেওয়াজ হিসাবেই গণ্য হয়ে থাকে। ধর্ম কি, কেনই বা ধর্ম পালন করতে হয়, সেসব ব্যাপারে তারা একেবারেই উদাসীন। পরকালে মুক্তির ব্যাপারে এ শ্রেণীর এক্বীনদারদের সন্দেহ রয়েছে। এলমুল এক্বীনের অধিকারী কোন লোককে যদি প্রশ্ন করা হয়, বলুন তো আপনি পরকালে মুক্তি পাবেন কিনা। উত্তরে সে বলে থাকে, “তা তো একমাত্র আল্লাই জানেন, আমি কি করে বলবো, কেননা এটা আর কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা মুক্তির আশা রাখি।” উত্তর প্রদানের ধরণ দেখেই এটা স্পষ্ট বুঝা যায়, মুক্তির ব্যাপারে তারা সন্দেহের মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছে। যদি বলা হয়, মুক্তি পাবেন কি পাবেন না, তা সঠিক না জেনে ধর্ম পালন করেন কেন? উত্তরে তারা বলবে, “অত শত জানিনা বাপু, পিতা-মাতার ধর্মই পালন করছি, তারা যা করতো আমরাও তা করছি। তাই বলে বাপ-দাদার ধর্ম আমরা ছাড়তে পারবো না। আমাদের কাছে আছে আসমানী কিতাব, আছে শত শত আলেম ওলায়েমা কেরাম, তারা আমাদেরকে যেভাবে ধর্ম কর্ম শিক্ষা দিয়ে থাকেন, সেভাবেই আমরা ধর্ম পালন করে থাকি। মুক্তি কে পাবে আর কে পাবে না, তা কোন মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে পরকালে মুক্তির আশা আমরা মনে প্রাণে ধারণ করে আছি।”

বর্তমান বিশ্বে যতগুলো ধর্ম আছে, প্রত্যক ধর্মের লোকেরাই পরকালে মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী। আশা রাখলেই কি সকলেই মুক্তি পাবে? পরজগতের শাস্তির ব্যবস্থাটা কি একেবারেই অহেতুক?

প্রত্যেক ধর্মের লোকেরাই নিজেদের মুক্তির ব্যাপারে যদিও নিশ্চিত নয়, কিন্তু অপর ধর্মের লোকদের যে পরকালে মুক্তি হবে না, এ ব্যাপারে তারা খুবই নিশ্চিত। তাই ধর্মীয় জগতে এক ধর্মের লোকদের সঙ্গে অপরাপর ধর্মের লোকদের মোটেই ঐক্য নাই, তারা পরস্পর মারাত্মক ফ্যাসাদে লিপ্ত। এমন কি বর্তমানে কোন একটি বিশেষ ধর্মের অনুসারীরাও ঐক্যবদ্ধ নয়। এক আল্লাহ, এক রাসুল, এক কিতাবের অনুসারী হওয়া সত্বেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে তারা আজ ব্যর্থ। একই ধর্মে বিভিন্ন শাখা-উপশাখা সৃষ্টি করে এক শাখার লোক অপর শাখার লোকদেরকে ভ-, কাফের, ফাসেক ইত্যাদি আখ্যায় আখ্যায়িত করে পরস্পর ধ্বংসাত্মক দ্বন্দ্বে লিপ্ত। এহেন ধর্মীয় ফ্যাসাদ ও ধ্বংসের জগৎ আর কেহ সৃষ্টি করে নাই, শুধুমাত্র আহলে কিতাবীগণ ও এলমুল এক্বীনদাররাই করেছে। আল্লাহ ফ্যাসাদ পছন্দ করেন না। তাই এসব ফ্যাসাদে লিপ্ত আহলে কিতাবীগণ ও এলমুল এক্বীনদারগণ পরকালে কি করে মুক্তি পেতে পারে?

এবার আসুন, অপরাপর ধর্মের কথা বাদ রেখে শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর আখেরী জমানার উম্মত সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক।

বর্তমানে উম্মতে মোহাম্মদীর এক্বীন ‘হাক্কুল এক্বীন’ নয় কারণ, এটি একমাত্র নবী-রসুল বা খাসবান্দাদের জন্য নির্ধারিত। তাদের এক্বীন আইনুল এক্বীনের স্তরেও পড়ে না। কারণ, নবী-রসুল বা খাসবান্দার ছোহবত ব্যতীত আইনুল এক্বীন পয়দা হয় না।

আজ থেকে চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর মনোনীত নবী ও রাসুল হিসাবে জগতে আগমন করেছিলেন। তিনি অবশ্যই সবচেয়ে উচ্চস্তরের এক্বীন অর্থাৎ হাক্কুল এক্বীনের অধিকারী ছিলেন। তৎকালে তাঁর অনুসারী সাহাবাগণের এক্বীন ছিল আইনুল এক্বীন। যেটা আজকে উম্মতে মোহাম্মদীর কারোর পক্ষে অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয়। বর্তমান বিশ্ব মুসলিম অর্জিত বিদ্যা আর আসমানী কিতাবের উপর নির্ভর করে ধর্মপালনকারী হিসাবে বড় জোর হতে পারে এলমুল এক্বীনের অধিকারী। তাই তাদের এক্বীন কোনক্রমেই এলমুল এক্বীনের উর্ধ্বে নয়।

বর্তমান সময়টা মুসলিম জগতে ভীষণ ধ্বংসের সময়। কারণ, নবী-রসুলের সংস্পর্শে আসা কোন মুসলমানের পক্ষেই আর সম্ভব হচ্ছেনা। নবী বিদায় নিয়েছেন প্রায় চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে, আর এখন নবী আগমনের দরজাটাও বন্ধ। কাজেই কোরআন হাদিসই বর্তমান বিশ্ব মুসলিমের একমাত্র ভরসা। কোরআন, হাদীস সঠিক থাকা সত্ত্বেও আজ তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পর বিবাদ-বিচ্ছেদে লিপ্ত। আর ঐক্য ভঙ্গ হওয়ার দরুণ বিধর্মী ও বিজাতীয়দের দ্বারা লাঞ্ছিত, অপমানিত, ঘৃণিত ও অত্যাচারিত। এটা কি তাদের ধ্বংসের লক্ষণ নয়?

এক সময় ইহুদি নাসারাগণও আসমানী কিতাবকে সম্ভল করে নবী-রসুল আগমনের দরজাটা বন্ধ করে বসেছিল। কিন্তু সেই বন্ধ দরজাটা ভেঙ্গে খান খান করে দিয়ে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর আগমন ঘটেছিল। ইউসুফ (আঃ) এর উম্মতদের বিশ্বাস ছিল ইউসুফ (আঃ) এর পর আল্লাহ আর কোন রসুল প্রেরণ করবেন না (কোরআন ৪০ঃ৩০)। অথচ ইউসুফ (আঃ) এর পর বহু নবী-রসুল জগতের বুকে আগমন করেছেন। এমন কোন নবী-রসুলই এ পর্যন্ত আসেনি, যিনি খোলা দরজা পেয়েছিলেন। সকলকেই বন্ধ দরজা ভেঙ্গেই আসতে হয়েছে। কোন যুগের মানুষেরা নবী-রসুলকে কখনোই সাদরে গ্রহণ করতে পারে নি; বরং তাঁর সাথে করেছে হাঁসি ঠাট্টা, তামাসা আর অন্যায় জোর-জুলুম।

এখন প্রশ্ন, আসমানী সত্য কিতাব অনুসরণ করার পর আবার নতুন নবী-রসুল আগমনের দরকার কি?

আসমানী কিতাবের অনুসরণ মুক্তি জন্য যথেষ্ট। কারণ, প্রত্যেক নবী-রসুলই আসমানী কিতাবের শিক্ষাই দিয়ে থাকেন। কিন্তু আহলে কিতাবীগণ উক্ত কিতাবের আদেশ-নিষেধ, উপদেশ ইত্যাদি ব্যাপারে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করে যখন বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পর ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহপাকের প্রদত্ত হেদায়েত আর থোকে না। কেননা, সত্য কিতাব থাকা সত্ত্বেও তারা বিভিন্ন শেরেকীতে লিপ্ত হয়ে ধর্মের মূল বিষয়ই হারিয়ে ফেলে। যদিও ধর্মীয় উপসনালয় শিক্ষালয়, ধর্মগুরু, কেতাব, ধর্মীয় মিশন ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে, তবুও ধার্মিকগণ থাকে হেদায়েত শূণ্য এবং দোযখের উপযোগী।

মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থখানি সম্পূর্ণ  পাক-পবিত্র ও নির্ভুল আসমানী কিতাব। পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতও পরিবর্তন হয় নাই বা একটি অক্ষরও ভুল নাই। উক্ত কালামুল্লাহ শরীফ যাতে জগতে কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকে সেজন্য বহু মাদ্রাসা, বহু আলেম-ওলেমা ও পীর-বুজুর্গ বিদ্যমান। এবাদত বন্দেগীর জন্য নির্মিত হয়েছে বহু বড় বড় মসজিদ। বিশেষ করে ঢাকাকে বলা হয় মসজিদ নগরী। মসজিদে নামাজীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বহু জামাত ও আলেমা-ওলেমা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতদসত্ত্বেও আমরা মুসলমানগণ দিন দিন চরম অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। আমরা বিধর্মীদের আশ্রিতজন হয়ে কতই না নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হচ্ছি। আমাদের চরিত্রও এমন জঘণ্য ও নিকৃষ্ট ধরণের হয়ে গেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। পত্র-পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় আমাদের সমাজে অজস্র খুন-খারাবী, রাহাজানী, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, নারী ধর্ষণ, নাবালিকার শ্লীলতাহানি ও ভয়াবহ যুদ্ধ বিগ্রহের এক করুণ দৃশ্য। এসব কাদের দ্বারা সংগঠিত হয়? মুসলমানদের দ্বারা নয় কি? এটাই কি সত্য কিতাবের খাঁটি অনুসরণকারীর পরিচয়? আর এটা কি হেদায়েত প্রাপ্তির লক্ষণ, না হেদায়েত শূণ্যতার লক্ষণ? কোথায় যায় মসজিদের ইমাম আর পীর-বুজুর্গদের দোয়া খায়ের?

কোরআনের পাক বাণী অনুযায়ী ঈমানদারগণ কখনো লাঞ্ছিত হবে না। আল্লাহপাক স্পষ্টভাবেই তাদের ইজ্জতের ঘোষণা দিয়েছেন। অতএব হে মুসলিম ভাইয়েরা, একবার ভেবে দেখুন তো, আমাদের ইজ্জত কতটুকু আছে, আর কেনই বা আমাদের এত দুর্দশা? ভেবে দেখুন, আসলে আমরা মোটেও ঈমানদার কি না। তা না হলে আমাদের ঈমান গেল কোথায়? নবী পাক (সঃ) এর একখানা হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘এমন একটি সময় অবশ্যই আসবে যখন আমার উম্মতের সাথে বনী ইসরাইলের এমন মিল হবে একজোড়া জুতোর একটার সাথে অপরটার যেমন মিল। বনী ইসরাইল যা করেছিল, আমার উম্মতও ঠিক তাই করবে। তাদের কেহ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উম্মতও তা-ই করবে। তারা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল, আর আমার উম্মত হবে তিয়াত্তর দলে বিভক্ত। প্রত্যেক দলই হবে জাহান্নামী শুধু একটি দল ব্যতীত। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, সেই দল কোনটি? হুজুর (সঃ) বললেন, “যে দলে আমি ও আমার সাহাবাগণ থাকবে” (তিরমিজি শরীফ)।

উক্ত হাদিসটির আলোকে দেখা যায় বর্তমান বিশ্বমুসলিম তিয়াত্তর দলে বিভক্ত। আর বনী ইসরাইল যা যা করেছিল, উম্মতে মোহাম্মদীর বাহাত্তরটি দলের তা তা করার কথা। এবার আসুন দেখি, বনী ইসরাইল কি কি গর্হিত কাজ করেছিল, যদ্দরুন তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছিল। প্রথমতঃ বনী ইসরাইলের সবচেয়ে অপরাধমূলক কাজ ছিল, তারা বহু নবী-রসুলকে হত্যা করেছিল। দ্বিতীয়তঃ তারা যা করতো তা ছিল শেরেকীতে পরিপূর্ণ, কিন্তু তা তারা নিজেরা বুঝতে পারতো না। তদুপরি তাদের ভুল বিশ্বাস্য বিষয়গুলোর কিছু কথা উল্লেখ করা হলোঃ

১।      তারা বিশ্বাস করতো আল্লাহর স্ত্রী-পুত্র আছে।

২।      আল্লাহ আর কোন নবী-রসুল প্রেরণ করবেন না।

৩।     আল্লাহর অহী বা কালাম শেষ্।

৪।      যে ব্যক্তি একবার তার রসুলের নামের ওপর কলেমা পাঠ করবে সে ব্যক্তি অবশ্যই একদিন না একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবে। পাপের জন্য হয়ত বা কিছুকাল জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।

৫।      হযরত ইলিয়াস (আঃ) মৃত্যু বরণ করেন নাই। তাঁকে আসমানে তুলে নেয়া হয়েছে। আবার তিনি আসবেন।

৬।     মানুষ কখনো নবী-রসুল হতে পারে না।

৭।      ধর্ম শাস্ত্রই যথেষ্ট, আর কোন নবী-রসুলের প্রয়োজন নাই।

আহলে কিতাবীদের এহেন বিশ্বাস্য বিষয়গুলো সম্পূর্ণরূপে কুফরী বিশ্বাস।

উল্লিখিত হাদীস অনুযায়ী উম্মতে মোহাম্মাদীর বাহাত্তর দলেরও অনুরূপ বিশ্বাস থাকার কথা, যদ্দরুন তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে। কেননা, উম্মতে মোহাম্মদীর সাথে বনী ইসরাইলের পূর্ণ মিল থাকার বিষয়টি হাদীসে স্পষ্টই লক্ষ্য করা যায়। অবশ্য একটি মাত্র দল তার ব্যতিক্রম থাকবে। এই ব্যতিক্রমধর্মী দলটিই শুধুমাত্র জান্নাতে যাবে, বাকী বাহাত্তর দলই হবে জাহান্নামী।

এখানে উম্মতে মোহাম্মদীর বাহাত্তর দলের এমন বিছু বিশ্বাস্য বিষয়ের উল্লেখ করা হচ্ছে, যেগুলো বনী ইসরাইলের বিশ্বাস্য বিষয়ের সাথে প্রায় হুবহু মিলে যায়ঃ

১।      নবী-নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ) কে আল্লাহর ‘মা’ হিসাবে তারা বিশ্বাস করে।

অথচ আল্লাহর মা, বাবা, স্ত্রী, পুত্র থাকার প্রশ্নই উঠে না। কারণ তিনি পাক-প্রবিত্র স্রষ্টা। তিনি অসৃষ্ট ও অমর। আর তার কোন শরীক নাই।

২।      তারা বিশ্বাস করে আল্লাহ আর কোন নবী-রসুল প্রেরণ করবেন না। ওহীর দরজা চিরতরে বন্ধ।

তারা কি বুঝে না, অনুরূপ বিশ্বাসের দরুণই বনী ইসরাইল ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে? নবী-রসুল প্রেরণ করা বা না করা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। নবী-রসুল আগমণের বা ওহীর দরজা খোলা বা বন্ধ করা মানুষের দায়িত্ব নয়। আল্লাহর বিধান এই যে, আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন বান্দাদের মধ্য হতে যার প্রতি ইচ্ছা ওহী অর্থাৎ স্বীয় নির্দেশ প্রেরণ করেন, যেন তিনি সম্মেলন দিবসের ভয় প্রদর্শন করেন। (কোরআন ঃ ৪০ঃ১৫)

৩।     জীবনে যে একবার বলবে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ” সে অবশ্যই একদিন না একদিন জান্নাতে যাবেই, যদিও পাপের দরুণ সে কিছুকাল জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে।

উক্ত বিশ্বাস্য বিষয়টি ইহুদী আলেমদের বিশ্বাস্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে ৩নং সুরার ২৪নং আয়াতে উক্ত বিষয়টিকে ইহুদী আলেমদের মনগড়া কথা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা ভাবতেও লজ্জাবোধ হয় উম্মতে মোহাম্মদীর বাহাত্তর দলের লোকেরা তোতাপাখির মত ইহুদীদের মনগড়া কথাকেই ঈমানের বিষয় ধরে নিয়ে হৃদয়ে পাকাপোক্ত ভাবে স্থান দিয়েছে। নিশ্চয়ই বনী ইসরাইলের সঙ্গে পুরোপুরি মিল থাকার জন্যই এরূপ হয়েছে। “লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” কালেমা একবার মুখে উচ্চারণ করলেই যখন জান্নাত, তবে আর কি চিন্তা! মনে যা লয় তাই তারা করতে পারে। সেজন্যই বর্তমানে চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, ছিনতাই, রাহাজানী, ব্যাভিচার, সুদ-ঘুষ ইত্যাদি কাজে তারাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বাহ! কি সুন্দর ধর্ম বিশ্বাস আর কি সুন্দর ধর্ম-কর্ম।

৪।      তাদের বিশ্বাস, “হযরত ঈসা (আঃ) মৃত্যুবরণ করেননি। তিনি চৌথা আসমানে আছেন। শেষ জমানায় হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর উম্মত হিসেবে তিনি আবার দুনিয়ায় আসবেন।”

উক্ত বিশ্বাস্য বিষয়টি ইহুদী আলেমদের কথিত হযরত ইলিয়াস নবীর (আঃ) মৃত্যুবরণ না করা, আসমানে অবস্থান এবং জগতে পুনঃআগমনের বিষয়টির সঙ্গে হুবহু মিল। ইহুদীদের উক্ত বিশ্বাসটি খ-ন করার জন্যই মহান আল্লাহ পাক কালামে ঘোষণা দিয়েছেন, “মাল্ মাসিহ্ ইবনে মারিয়ামা ইল্লা রাসুল, কা’দ খালাত মিন কাবলিহির রসুল” অর্থাৎ মরিয়মের বেটা ঈসা মসিহ্ একজন রসুল ব্যতীত নন, তাঁর পূর্বের রসুলগণ গত হয়ে গেছেন। আর তেমনি ভবিষ্যতে উম্মতে মোহাম্মদীর বাহাত্তর দলের বিশ্বাস খ-ন করার জন্যই আল্লাহতায়ালা পাক কালামে আবারও ঘোষণা দিয়েছেন। “অমা মোহাম্মাদুন ইল্লা রসুল, কা’দ খালাত মিন কাবলিহির রসুল” – অর্থাৎ মোহাম্মদ (সঃ) একজন রসুল ব্যতীত নন, তাঁর পূর্বের রসুলগণ গত হয়ে গেছেন।

ভাবতেও ঘৃণা হয়, নবী-রসুল কি আর উম্মত কি তা’ও তারা বুঝে না। কোন রাসুলের সঙ্গে কোন উম্মতের পার্থক্য আসমান-জমিন ফারাক। অথচ উম্মতে মোহাম্মদীর বাহাত্তর দলের লোকেরা নিজেদেরকে এতই মর্যাদাবান মনে করে যে হযরত ঈসা (আঃ) একজন জলিল ও কদর রসুল হওয়া সত্ত্বেও যেন একজন আধনা উম্মতের সমান মর্যাদা আজও হাছেল করতে পারেন নি। তাই হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর একজন উম্মতের সমান মর্যাদা লাভের জন্য তাঁকে ফের দুনিয়ায় আসতেই হবে, নইলে যে ঈমান বরবাদ হয়ে যাবে। হায়রে ঈমান! একজন রসুলকে অতি উর্ধ্বে উঠাতেও বিলম্ব হয় না, আবার অন্য জনকে অতি নীচে নামাতেও দ্বিধা বোধ হয় না। যে রসুলের মর্যাদা উম্মতে মোহাম্মদীর নীচে, এমন রসুলের প্রতি ঈমান রাখার জন্য কি কোরান পাকে তাগিদ রয়েছে? আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “রসূলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।” অথচ তারা একজন অন্যতম রসুলকে কোন্ সাহসে নিজেদের মর্যাদার চেয়ে হীন মর্যাদাবান ভাবতে পারে, আর এটাই নাকি তাদের ঈমান। এভাবে তারা কি কোরআনের বিপরীত বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছে না? বেঈমান হবার জন্য তাহলে আর কিছু বাকী রইল কি?

৫।      তারা বিশ্বাস করে, “হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর ছায়া ছিল না; তাঁর জন্ম প্রণালীও ছিল ভিন্ন এবং জন্মের সময় তিনি পোষাক পরিধান করেই জন্ম গ্রহণ করেছিলে। তাঁর শরীর থেকে যে ঘাম বের হতো তাও সাধারণ মানুষের মত নয়। তাঁর ঘাম থেকে মেশ্ক আম্বরের চেয়েও বেশী সুগন্ধ বের হতো। “তাহলে তিনি আর মানুষ রইলেন কোথায়? অথচ প্রত্যেক নবী-রসুলই মানুষ ছিলেন। এমন কি হযরত মোহাম্মদ (সঃ)ও বলেছেন, “আনা বাশারুম মিছলুকুম ইউহা ইলাইয়া”- অর্থাৎ আমি তোমাদের মতই মানুষ, পার্থক্য শুধু এতটুকু যে আমার নিকট আল্লাহ বাণী (ওহী) আসে, তোমাদের নিকট তা আসে না।

৬।     কোরআন-হাদীসই বিশ্ব মুসলিমের জন্য যথেষ্ট। আর কোন নবী-রসুল বা পথ প্রদর্শকের প্রয়োজন নেই।

এখানে চিন্তার বিষয় এই যে কোরান-হাদিস যদি যথেষ্টই হবে সেসব বিদ্যমান থাকার পরেও কেন উম্মতে মোহাম্মদী তেহাত্তর দলে বিভক্ত হয়ে পরস্পর বিবাদ-বিচ্ছেদে লিপ্ত থেকে ধ্বংসের দিকে ধাবমান?

৭।      তাদের বিশ্বাস, “আওয়ালে নবী, আখেরে নবী মোহাম্মদ, জাহেরে নবী, বাতেনে নবী মোহাম্মদ” অর্থাৎ হযরত মোহাম্মদ (সঃ) প্রথমেও ছিলেন শেষেও থাকবেন, গোপনেও আছেন, প্রকাশ্যেও আছেন।

লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, আল্লাহর কোন শরীক নেই। তাঁর কোন সেফাতের বা গুণের সমতুল্য কোন সেফাত বা গুণ কারও থাকতে পারে না। কাজেই আল্লাহর কোন সেফাতই কোন নবীর শানে প্রযোজ্য হতে পারে না। কারণ, নবী-রসুল সৃষ্ট আল্লাহ স্রষ্টা। স্রষ্টা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, “হুয়াল আওয়ালু ওয়াল আখেরো ওয়াজ জাহেরু ওয়াল বাতেনু।” – অর্থাৎ আল্লাহ প্রথমেও ছিলেন, শেষেও থাকবেন, তিনি প্রকাশ্যেও আছেন, গোপনেও আছেন। যারা আল্লাহর গুণের সমান গুণ হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর শানে স্থাপন করে আল্লাহর আসনে তাঁকে বসালেন, তারা একটু ভেবে দেখুন, এর চেয়ে বড় শেরেকী আরও কিছু আছে কি? নাছারাগণ ঈসা (আঃ) কে খোদার বেটা সাব্যস্ত করায় যদি শেরেকী হয়, সেখানে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে খোদার সমকক্ষ সাব্যস্ত করায় শেরেকী হবে না কেন?

৮।     তারা বিশ্বাস করে, “কাল হাশরের ময়দানে সকল নবী-রসুলগণ ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী – অর্থাৎ আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও বলে ছুটাছুটি করবে আর কেবল হযরত মোহাম্মদ (সঃ) “ইয়া উম্মতি, ইয়া উম্মতি” করবে।

এই বিষয়টি নিশ্চয়ই হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ও অন্যান্য নবী-রসুলগণ জগতের বুকে বিদ্যমান থাকা অবস্থায়ই আল্লাহর নিকট থেকে অবগত হওয়ার কথা। কোন নবী বা রসুল যদি তাঁর উম্মতের নিকট উক্ত বিষয়টি প্রকাশ করে তাঁর মতে বা পথে চলার আহ্বান করতেন, তবে তাঁর উম্মতেরা অবশ্যই বলতো, “যে নবী হাশরের ময়দানে উম্মতের কথা ভুলে গিয়ে ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী বলে তাঁর নিজের জন্য হায় হুতাশ করবে, তেমন নবীকে মান্য করবো কিসের জন্য? এইরূপই যদি হতো, তাহলে কি দুনিয়ার বুকে কোন নবী-রসুলের উম্মত গজাতো? আর যদি বলা হয়, নবী-রসুলগণ হয়তো বা উক্ত বিশ্বাস্য বিষয়টি উম্মতের নিকট গোপন করেছিলেন। তবে শুনুন, কোন নবী-রসুলই আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত বাণী উম্মতের নিকট গোপন করে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে জগতের বুকে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন নাই। নবী-রসুলের পক্ষে ধোঁকাবাজী করা অশোভনীয় ও অকল্পনীয়। প্রত্যেক নবী-রসুলই উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। প্রত্যেক নবী-রসুলই নিজ নিজ উম্মতের সাক্ষী। রসুলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

এখন স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে কোরআন-হাদীস বিদ্যমান থাকার পরেও উম্মতে মোহাম্মদী আজ কোরআন-হাদীসের বিপরীত বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছে। বনী ইসরাইলরা যেমন কিতাব থাকা সত্ত্বেও মনগড়া পথে চলে হয়েছিল পথভ্রষ্ট, আল্লাহও তেমন তাদের পথ দেখানোর জন্যে প্রেরণ করেছিলেন বহু নবী-রসুল যাদের অনেককেই করেছে অস্বীকার এবং কাউকে করেছে হত্যা। আর বলেছে, আমাদের কাছে সত্য কিতাব থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ আবার নবী-রসুল কেন পাঠাবেন?

উম্মতে মোহাম্মদী আজ তেমনি পবিত্র কোরআন-হাদীস থাকা সত্ত্বেও শেরেকীতে পরিপূর্ণভাবে লিপ্ত হয়ে এবং নিজেদের মনগড়া মতে ও পথে চলে চির জাহান্নামের উপযোগী হয়ে পড়েছে। আল্লাহর হাবীব হযরত মোহাম্মদ (সঃ) মানব মুক্তির পথ পদর্শনের জন্য আজীবন ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। তাঁর উম্মতের এই দুর্দশার দিনে আল্লাহপাক দয়া করে তাঁর হাবিবের উছিলায় হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর প্রাণ প্রিয় ইসলামকে পুনরায় চৌদ্দশ’ বছর পূর্বের ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটা চুড়ান্ত ব্যবস্থা না নিলে ধ্বংস ও চির জাহান্নমের পথ থেকে উম্মতে মোহাম্মদীকে রক্ষার আর কোন উপায় আছে?

বর্তমান জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কত শত শত দল গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু শান্তি তো তারই নিকট, যিনি এ জগত সৃষ্টি করেছেন এবং রক্ষণাবেক্ষন করছেন । আর মঙ্গল এবং অমঙ্গলের মালিকও এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ রব্বুল আলামিনই।

শান্তি প্রতিষ্ঠার সেøাগান দিয়ে যতগুলো দল বিদ্যমান রয়েছে, সেই সবগুলোকে মূলতঃ তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছেঃ (১) ব্যক্তি কেন্দ্রিক দল, (২) শাস্ত্র কেন্দ্রিক দল, (৩) স্রষ্টা কেন্দ্রিক দল।

যেহেতু মানুষের শান্তি ও পরকালের মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা কোন ব্যক্তি বা শাস্ত্রের নেই, এসব সম্পূর্ণরূপে অহেদ খোদাপাকের  জিম্মায় রয়েছে, সেহেতু ব্যক্তি কেন্দ্রিক দল বা শাস্ত্র কেন্দ্রিক দল গুলো শান্তি শান্তি করে যতই চিল্লাপাল্লা করুক না কেন স্রষ্টার দরবারে তাদের জন্য চির অশান্তি সাব্যস্থ হয়ে রয়েছে ।

তৃতীয় দলটি অর্থাৎ স্রষ্টা কেন্দ্রিক দলটিই একমাত্র সফলকাম। এই দলটিকে পবিত্র কোরআনে হেজবুল্লাহ বা আল্লাহর দল আখ্যা দেয়া হয়েছে। অবশ্য হেজবুল্লাহর দলপতি একজন মানুষই হবেন। কেননা, আল্লাহ মাধ্যম ছাড়া কোন কিছু করেন না। তবে এই মানুষটি অবশ্যই আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত হতে হবে। আল্লাহর নিকট থেকে শান্তি ও মুক্তির প্রতিশ্রুতি প্রাপ্ত হয়ে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি বিশ্ববাসীকে আহ্বান করবেন। সেই আহ্বান মূলতঃ স্রষ্টারই আহ্বান যারা এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পন করতঃ মুসলিম হবেন, তাদের জন্য কোন দুর্ভাবনা বা দুঃখ কষ্টের কারণ থাকবে না। পরজগতে তাদের জন্য দয়াময় আল্লাহর রাব্বুল আলামিন চির সুখময় স্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন। আর যারা অবজ্ঞাবশতঃ সেই আহ্বান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তারাই হবে চির অগ্নিময় স্থানের অধিবাসী। দুনিয়ার বুকেও তাদের জন্য আল্লাহর গজব সাব্যস্থ হয়ে রয়েছে। মহান প্রভু আল্লাহপাকের শাহী দরবারে এই অধমের আকুল প্রার্থনা, তিনি যেন তার হাবীব হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর উছিলায় বর্তমান জগতের পথভ্রষ্ট মানুষের পথ দেখানের জন্য তার মনোনীত বান্দার আহ্বানে সাড়া দেওয়ার তৌফিক দান করেন উম্মতে মোহাম্মদীসহ সমগ্র বিশ্ববাসীকে। আল্লাহপাক এ অধমকে যেন মেহেরবানী করে তারই সে খাস বান্দার পাক চরণে জীবনের শেষ নিঃস্বাসটি পর্যন্ত থাকার তৌফিক দান করেন। আল্লাহুম্মা আমিন। অ আখের দাওয়ানা আনিল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।।