“বিসমিলাহির রাহমানির রাহীম”
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের
মহামান্য প্রেসিডেন্ট
জনাব জিয়াউর রহমানের রবাবরেষু,
আচ্ছালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহে অবারাকাতুহু।
শ্রদ্ধেয় বাবা,
আপনার সমীপে এই নগণ্য দাসের প্রার্থনা এই যে, কিছুদিন যাবত আমার মনে একটি দুঃসহ যাতনা অনুভব করিতেছি যাহা আপনার নিকট প্রকাশ করা ব্যতীত কিছুতেই প্রশমিত হইতেছে না। তাই উহা আমি এখানে বর্ণনা করিতেছি। আমার একান্ত অনুরোধ, অনুগ্রহ পূর্বক বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি বিবেচনা করিয়া দেখিতে মর্জি ফরমাইবেন।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনে যে অশান্তি দেখা দিয়াছে, কম-বেশী সকলেই ইহা অনুভব করিতে পারিতেছে। ইহার প্রতিকার ও বিশ্ব শান্তি কায়েম করিবার জন্য চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ যে চেষ্টা করিতেছেন,ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। আমি সরল ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই ব্যাপারে আমার ন্যায় নগণ্য ব্যক্তির কোন চিন্তা ভাবনা করা নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু তবুও আমার মনে এই ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা জাগিয়া উঠিয়াছে। যদ্দরুন আপনাকে বিরক্ত করিতে বাধ্য হইয়াছি।
যাহা হউক সর্বপ্রম এই অশান্তির মূল কারণটা আমাদের জানা দরকার। অশান্তির মূল কারণ হইল ঝগড়া। আর ঝগড়ার মূল কারণ হইল পরস্পর মতানৈক্য। কাজেই শান্তির মূল হইল মতানৈক্যের সুষ্ঠু মীমাংসা। এখন প্রশ্ন হইতে পারে যে, বিশ্ব মানব অনেক বিষয়েই মতানৈক্যে জড়িত; সুতরাং কোন্ বিষয়ের মীমাংসা হওয়া সর্ব প্রথম দরকার আর কোন্ পদ্ধতিতেই বা মীমাংসা হইতে পারে। এর উত্তরে এই নগন্য বান্দা বলিতে চাই যে বর্তমান বিশ্বমানব প্রধানতঃ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত চালক ও চালিত বা শাসক ও শাসিত। চালিত বা শাসিতদের যে কোন মতানৈক্যের মীমাংসা চালক বা শাসকদের দ্বারা সহজেই হইতে পারে কিন্তু চালক বা শাসকদের মধ্যে মতানৈক্য ঘটিলে সুষ্ঠুভাবে তার মীমাংসা করা বিশ্ব মানবের পক্ষে অসম্ভব হইয়া পড়ে। এমনি সমস্যার যুগেই ঐশ্বরিক মীমাংসার দরকার হয়। এখানে বর্তমান বিশ্ব-সমস্যা সমূহের সর্ব প্রধানটির বাস্তবরূপ তুলিয়া ধরিতেছি। অনুরোধ করি, দয়া করিয়া ইহার যথার্থতা অনুধাবন করিতে মর্জি ফরমাইবেন।
এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, বর্তমান বিশ্ব-সমাজ ব্যবস্থার ক্ষুদ্রতম সমাজ (Unit) হইল ইউনিয়ন কাউন্সিল এবং বৃহত্তম সমাজ হইল জাতিসংঘ। প্রতি সমাজেই এক এক জন সমাজপতি বা চালক আছেন এবং সকল সমাজপতিই বিশ্ব-মানবের ঐক্য প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী এবং ইহারই ফল শ্রুতিতে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর হইয়াছে। অথচ সমাজপতিগণের মধ্যে বর্তমানে এমন একটি প্রধান বিষয়ে জটিল মতানৈক্য রহিয়াছে যাহার সুষ্ঠু মীমাংসা করিতে পারিলেই বিশ্ব মানব নিশ্চিত শান্তির জীবন লাভ করিতে পারিবে বলিয়া আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পক্ষান্তরে উহার মীমাংসা করিতে শৈথিল্য করিলে উক্ত মতানৈক্যের কুফল প্রত্যক্ষ লড়াইয়ের আগুনে পরিণত হইয়া বিশ্বমানব সভ্যতাকে পোড়াইয়া ছাইভষ্ম করিয়া দেওয়ারও নিশ্চিত সম্ভাবনা রহিয়াছে।
এখন জানা দরকার সেই সমস্যাটি কি? বিশ্বের একশ্রেণীর মানুষ বিশ্বাস করে যে এই বিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, মানুষ মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত হইবে। এই পৃথিবীর কাজের জন্য পরকালে বিচার হইবে, ভাল কাজের বিনিময়ে শান্তি ও মন্দ কাজের বিনিময়ে শাস্তি ভুগিতে হইবে ইত্যাদি। অপর শ্রেণীর মানুষ উপরোক্ত বিশ্বাসের ঘোর বিরোধী। তাহাদের বিশ্বাস, এই পৃথিবীর সব কিছুই প্রাকৃতিক নিয়মে সৃষ্টি ও লয় হয়। মানুষও তদ্রুপ। তবে মানুষ সাধনা ও পরিশ্রম করিয়া যে জ্ঞান অর্জন করে তাহা খাটাইয়া যে যত বেশী উন্নতি করিতে পারে, সে ততবেশী শান্তির জীবন যাপন করিতে পারে এবং ইহাই তাহার সৌভাগ্য। আর যে অলস, পরিশ্রম করিয়া জ্ঞান অর্জন করে না এবং কর্মের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করিতে চেষ্টা করে না, সে অশান্তির জীবন যাপন করে। ইহাই তাহার দুর্ভাগ্য। সুতরাং এই জগতই মানুষের কর্ম ও ফল ভোগের স্থান। পরকাল বলিতে কিছুই নাই।
বাবা, আমি অনুরোধ করি, বিরক্ত হইবেন না, আলোচ্য বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করিয়া দেখিবেন। উক্ত দুই বিপরীত বিশ্বাসে বিশ্বাসী মানুষ কি পৃথিবীর সর্বত্র দেখা যাইতেছে না? আর উক্ত দুই বিপরীত বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের মধ্যে প্রকৃত ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব গড়িয়া উঠা কি সম্ভবপর? না, তাহা কখনো হইতে পারে না। আর এ মতানৈক্যের মীমাংসা হওয়া যদিও একান্ত দরকার, তবুও তাহা হইতে পারিতেছে না, কেননা, উভয় পক্ষেই রহিয়াছে শক্তিশালী রাষ্ট্র নায়কগণ। আর যেহেতু দুই সমান শক্তিশালী ব্যক্তির মতানৈক্যের মীমাংসা তাহারা নিজেরা করিতে পারে না, যতক্ষণ উভয় পক্ষ অপেক্ষা অধিকতর ক্ষমতাশালী অপর এক তৃতীয় পক্ষ মীমাংসাকারক না হয়। অতএব এই সমস্যাটি সমাধানের জন্যই বিশ্ব প্রভুর ঐশ্বরিক মীমাংসা একান্ত প্রয়োজন।
এখানে একটি প্রশ্ন উঠিতে পারে যে, যাহারা স্রষ্টা বিশ্বাস করে না তাহারা আবার বিশ্ব প্রভুর মীমাংসা মানিবে কেন। তাহার উত্তর এই যে, সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীগণ অজ্ঞ বা পাগল নহেন। তাহাদের মধ্যে অনেক বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক আছেন। কিন্তু তাহারা যে কারণে স্রষ্টা মান্য করেন না তার মূলে রহিয়াছে স্রষ্টা মান্যকারীদের ধর্মমত ও পথ লইয়া মতানৈক্যজনিত ঝগড়া। এখানে আমি স্রষ্টা অমান্যকারীদের পক্ষে কিছু বলিতেছি। তাহাদের বক্তব্য হইল, “আমরা বিশ্বাস করিয়া, কর্ম ও কর্তা ধ্রুব সত্য। কর্তা ছাড়া কোন কর্ম হইতে পারে না। আমি একটি কর্ম বই কিছু নই, সুতরাং আমার একজন কর্তা অবশ্যই আছেন। একটু চিন্তা করিলেই বুঝা যায়, বিশ্বের মানুষ আমারই মত জাত, যেহেতু সকলেই পিতা-মাতার মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে, শৈশবকালে সকলেই চলার শক্তি, বলার শক্তি ও জ্ঞান শক্তি হইতে বঞ্চিত থাকে। সকল মানুষেরই একটি মাত্র মন আছে। সকলের মনই স্বাস্থ্য পছন্দ করে, রোগ ঘৃণা করে। সকল মানুষেরই পিপাসা আছে এবং পিপাসা নিবারণের জন্য একই বস্তু রহিয়াছে। সকল মানুষের মাথার উপর একটি মাত্র আকাশ, সকল মানুষেরই প্রয়োজন মিটাইবার জন্য একটি মাত্র সূর্য রহিয়াছে। অত্রএব সূর্যের মালিক যিনি, বিশ্বমানবের মালিকও তিনিই। সূর্য যখন একটি, সূর্যের মালিক কি একাধিক হইতে পারেন? তাহা কখনো হইতে পারে না। তাহা হইলে সেই বিশ্ব স্রষ্টার নৈকট্য লাভের জন্য তাঁহার মনোনীত সরল পথ একটিই হইবে একাধিক হইতে পারে না। কিন্তু আজ দেখা যায় শত শত আহবানকারী শত শত ধর্ম-মত ও পথে মানুষদিগকে আহবান করিতেছে এবং প্রত্যেক আহ্বানকারী নিজেকে সঠিক বলিয়া দাবী করিতেছে এবং অপর আহ্বানকারীকে ভ্রান্ত বলিয়া দোষারূপ করিতেছে। এমতাবস্থায় আমি কাহার পথ সঠিক বলিয়া বুঝিব এবং কাহার ডাকে সাড়া দিব? কাজেই আমি বিশ্বাস করি যে, এই ধর্মীয় মতানৈক্যের মীমাংসা হওয়া এই মুহূর্তে একান্ত প্রয়োজন অথচ ইহার মীমাংসার সুষ্ঠু ব্যবস্থা পৃথিবীর কোথাও দেখিতেছি না। ইহার সুষ্ঠু মীমাংসাকারক কোথাও আছেন বলিয়া যদি কেহ দাবী করেন, তাহা হইলে আমি জানিতে চাই, তিনি কোথায় আছেন এবং কিসের বলে তিনি মীমাংসা করিবেন? যদি বলা হয় যে, তিনি ধর্মশাস্ত্র দ্বারা মীমাংসা করিবেন, আমি বলিব তাহা কখনো হইতে পারে না। কেননা, আজিকার বিশ্বে এমন কোন ধর্মশাস্ত্র নাই, যে শাস্ত্র লইয়া উক্ত শাস্ত্র মান্যকারীদের মধ্যেই মতানৈক্য জনিত ঝগড়া না আছে।
বহু ধর্মের প্রসঙ্গ বাদ দিয়া শুধুমাত্র একটি বিশিষ্ট ধর্মের কথা ধরিলেও দেখা যাইবে যে, শাস্ত্র দ্বারা মতানৈক্যের কোন মীমাংসা হইতেছে না। প্রমাণ স্বরূপ বলা যায়, হিন্দু রাষ্ট্র বিদ্যমান থাকা সত্বেও হিন্দু শাস্ত্র দ্বারা হিন্দু ধর্মের মতানৈক্যের মীমাংসা হইতেছে না। তদ্রুপ মুসলিম রাষ্ট্রেও ইসলাম লইয়া যে মতানৈক্য কোরআন দ্বারা তাহার মীমাংসা সেখানে হইতেছে না ইত্যাদি। কাজেই আমি সরল ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমার অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন; আমি অন্তর আত্মা দিয়া সেই বিশ্ব প্রভুকে ডাকিয়া থাকি এবং তাঁহার মীমাংসাই যে বিশ্ব মানব জাতির একমাত্র শান্তির পথ, তাহা ছাড়া অন্য কোন পথ নাই ইহাতে আমি অটল বিশ্বাসী। কিন্তু তবু আমি একজন মহাপাপী, যেহেতু বর্তমান অবস্থায় কোন বিশ্ববাসীকেই অনুসরণ বা অনুকরণ করিয়া স্রষ্টা মান্য করিতে আমি অক্ষম।” এই হইল স্রষ্টা অমান্যকারীদের অভিযোগ। এই অভিযোগের প্রতিবাদে স্রষ্টা মান্যকারীদের পক্ষে কোন জবাব আছে কি?
বাবা, আমি বিশ্বাস করি যে, বিশ্বমানব জাতির শান্তি কায়েম করিবার জন্য বিশ্ব মানবের ঐক্য গড়িতে হইবে এবং বিশ্ব মানবজাতিকে এক নীতি অবলম্বন করিতে হইবে। আর সেই নীতি পাওয়ার জন্য বিশ্ব মানবজাতিকে বিশ্ব স্রষ্টার আসমানী মীমাংসার আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইবে। আর ইহাই হইল স্রষ্টা অমান্যকারীদের প্রতিবাদে স্রষ্টা মান্যকারীদের পক্ষ হইতে মোক্ষম জবাব।
বাবা, আসমানী মীমাংসা যেহেতু বিশ্ব-মানবের মঙ্গলের জন্য বিশ্ব-প্রভুর নিকট হইতে প্রদত্ত একটি মীমাংসা, সেহেতু বিশ্বমানব কেন্দ্র অর্থাৎ জাতিসংঘের মাধ্যমেই ইহার বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ কোন দেশ বা অঞ্চলে ইহা কার্যকর করিতে গেলে শান্তির বদলে অশান্তি বৃদ্ধি পাইবে। অবশ্য কোন একটি দেশকেই এই ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে। বাবা, যেহেতু আপনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব বহন করিতেছেন, সেহেতু এদেশেরই একজন নগণ্য নাগরিক হিসাবে আমি আপনাকে ব্যতীত আর কাহাকেই বা অনুরোধ করিতে পারি? সে যাহা হউক আসমানী মীমাংসা বাস্তবায়নের পরিকল্পনাটি সংক্ষেপে এখানে বর্ণনা করিতেছিঃ-
(১) স্থায়ী বিশ্ব-শান্তি কায়েম করার স্বার্থে জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রবর্গের ধর্মাবলন্বী ও বিভিন্ন মতবাদীগণের মধ্য হইতে প্রতিনিধিত্বকারী সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণকে লইয়া জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ হইতে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পেশ করা।
(২) এই সভায় অংশ গ্রহণকারী সকল প্রতিনিধিগণের জন্য নিম্নরূপে শপথ করার শর্ত আরোপ করা যথা, “আমি স্বীকার করিতেছি যে, আমাদের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। তিনিই আমাদিগকে অনস্তিত্ব হইতে অস্তিত্ববান করিয়াছেন। সুতরাং তাঁহার বাধ্যগত থাকা আমাদের জন্য মঙ্গল জনক। কাজেই তাঁহার মনোনীত পথে চলার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে যে মতানৈক্য ঘটিয়াছে উহার মীমাংসার জন্য আমরা তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি এবং তাঁহার পক্ষ হইতে যে ব্যক্তি আদেশ প্রাপ্ত হইয়াছেন বলিয়া দাবী করিবেন,আমরা বিনা দ্বিধায় তাঁহাকে মানিয়া লইব এবং তাঁহার পরামর্শ অনুসারে কাজ করিয়া বিশ্ব ঐক্য গড়িয়া তুলিব।”
(৩) সভায় প্রতিনিধিত্বকারীগণের প্রত্যেকের নিকট হইতে নিম্নবর্ণিত স্বীকারোক্তি লিখিতভাবে রাখার শর্ত ও থাকিবে, যথা-“সৃষ্টিকর্তার আদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি তিনি যে কোন দেশবাসী বা যে কোন মতবাদীই হউন না কেন তাঁহাকে গ্রহণ করিতে আমরা বাধ্য থাকিব, যেহেতু সৃষ্টিকর্তা যখন একজন তখন তিনি একজনকেই মীমাংসাকারক নিযুক্ত করিবেন।”
(৪) অতঃপর একটা সময়সীমা নির্ধারিত করিয়া উক্ত মেয়াদ পর্যন্ত সকল প্রচার যন্ত্রের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার আদেশ-প্রাপ্ত হওয়ার দাবীদার ব্যক্তি, তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, তাঁহাকে তাঁহার দাবী পেশ করিতে অনুরোধ করা। নির্ধারিত সময় পরে কেহ দাবী পেশ করিলে তাহা অগ্রাহ্য করা।
(৫) তারপর উক্ত দাবীদারের দাবীর সত্যতা প্রমাণের জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলি প্রয়োগ করা। যথাঃ
(ক) দাবীদারের বয়স ৪০ (চল্লিশ) বৎসরের কম হইবে না।
(খ) সৃষ্টিকর্তার পরিচয় দিতে হইবে।
(গ) উক্ত প্রত্যাদেশ অন্তত ১২ (বার) বৎসর পূর্ব হইতে পাইয়া থাকিবেন এবং এই সময়ের মধ্যে কি কি কালচার করিয়া আসিয়াছেন তাহা দেখাইতে হইবে।
(ঘ) প্রত্যাদেশ প্রাপ্তির পূর্ব হইতে তাঁহার উপর কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটিয়াছে কি না তাহা জানাইতে হইবে?
(ঙ) তাঁহার ঘনিষ্ঠ পরিচিত লোকদের মধ্যে তাঁহাকে সত্যবাদী, চরিত্রবান ও বুদ্ধিমান বলিয়া পরিচিত হইতে হইবে।
উক্ত লক্ষণ বিশিষ্ট মানুষই স্রষ্টার পক্ষ হইতে মনোনীত মীমাংসাকারক বলিয়া গণ্য হইবেন, যেহেতু উক্ত লক্ষণযুক্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার বিশেষ দয়া ছাড়া কেহ সাধনার বলে হইতে পারেন না।
বাবা, জাতিসংঘের বর্তমান কাঠামোতে এবং বিশ্বের রাষ্ট্র সমূহের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মাধ্যমে উল্লিখিত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে নানান জটিলতা, অসম্ভাব্যতা ও অগ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন উত্থিত হওয়ার সকল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আসমানী মীমাংসার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করা এবং তাহা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিটি মানুষেরই কর্তব্য বলিয়া আমি মনে করি এবং রাষ্ট্রপতি হিসাবে আপনার দায়িত্ব সর্বাধিক কেননা, এ দেশবাসী সকলের মঙ্গল- অমঙ্গলের বিষয় চিন্তা ভাবনা করার দায়িত্ব আপনার উপরই ন্যস্ত। সুতরাং এদেশ ও দেশবাসীর কল্যাণার্থে এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সকল প্রকার উদ্যোগ আয়োজন করা সর্ব প্রম আপনারই কর্তব্য বলিয়া আমি মনে করি। আমি ত সংবাদ পৌঁছাইবার জন্য একজন দাস মাত্র।
বাবা, এখন আমি সেই বিশ্ব প্রভুর উপর ভরসা করিয়া পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করিতেছি যে, যদি উপরোল্লিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহা হইলে প্রভুর দয়ায় সেই মানুষ অবশ্যই পাওয়া যাইবে এবং তাঁহার মীমাংসা গ্রহণ করা হইলে পৃথিবীতে অবশ্যই শান্তি কায়েম হইবে। আর ইহাই আসমানী মীমাংসা।
বাবা, আমি সেই মালিকের উপর ভরসা করিয়া ইহাও ঘোষণা করিতেছি যে, যদি উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে মতানৈক্য জনিত ঝগড়ার দরুন জগদ্বাসী অবশ্যই ধ্বংস হইবে।
বাবা, আমার মনের দুঃখ অকপটে আপনার হুজুরে পেশ করিলাম। এখন ইহা কার্যকরী করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা বা না করা আপনার ইচ্ছাধীন। এই ব্যাপারে যদি বিস্তারিত কিছু আলোচনা করার প্রয়োজন অনুভব করেন, তাহা হইলে, অনুমতি দিলে এই নগণ্য দাস আপনার খেদমতে হাজির হইতে আগ্রহী।অ আখেরে দাওয়ানা আনেল হামদু লিল্লাহে রাব্বিল আলামিন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের
মহামান্য প্রেসিডেন্ট
জনাব জিয়াউর রহমানের রবাবরেষু,
আচ্ছালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহে অবারাকাতুহু।
শ্রদ্ধেয় বাবা,
আপনার সমীপে এই নগণ্য দাসের প্রার্থনা এই যে, কিছুদিন যাবত আমার মনে একটি দুঃসহ যাতনা অনুভব করিতেছি যাহা আপনার নিকট প্রকাশ করা ব্যতীত কিছুতেই প্রশমিত হইতেছে না। তাই উহা আমি এখানে বর্ণনা করিতেছি। আমার একান্ত অনুরোধ, অনুগ্রহ পূর্বক বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি বিবেচনা করিয়া দেখিতে মর্জি ফরমাইবেন।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনে যে অশান্তি দেখা দিয়াছে, কম-বেশী সকলেই ইহা অনুভব করিতে পারিতেছে। ইহার প্রতিকার ও বিশ্ব শান্তি কায়েম করিবার জন্য চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ যে চেষ্টা করিতেছেন,ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। আমি সরল ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই ব্যাপারে আমার ন্যায় নগণ্য ব্যক্তির কোন চিন্তা ভাবনা করা নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু তবুও আমার মনে এই ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা জাগিয়া উঠিয়াছে। যদ্দরুন আপনাকে বিরক্ত করিতে বাধ্য হইয়াছি।
যাহা হউক সর্বপ্রম এই অশান্তির মূল কারণটা আমাদের জানা দরকার। অশান্তির মূল কারণ হইল ঝগড়া। আর ঝগড়ার মূল কারণ হইল পরস্পর মতানৈক্য। কাজেই শান্তির মূল হইল মতানৈক্যের সুষ্ঠু মীমাংসা। এখন প্রশ্ন হইতে পারে যে, বিশ্ব মানব অনেক বিষয়েই মতানৈক্যে জড়িত; সুতরাং কোন্ বিষয়ের মীমাংসা হওয়া সর্ব প্রথম দরকার আর কোন্ পদ্ধতিতেই বা মীমাংসা হইতে পারে। এর উত্তরে এই নগন্য বান্দা বলিতে চাই যে বর্তমান বিশ্বমানব প্রধানতঃ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত চালক ও চালিত বা শাসক ও শাসিত। চালিত বা শাসিতদের যে কোন মতানৈক্যের মীমাংসা চালক বা শাসকদের দ্বারা সহজেই হইতে পারে কিন্তু চালক বা শাসকদের মধ্যে মতানৈক্য ঘটিলে সুষ্ঠুভাবে তার মীমাংসা করা বিশ্ব মানবের পক্ষে অসম্ভব হইয়া পড়ে। এমনি সমস্যার যুগেই ঐশ্বরিক মীমাংসার দরকার হয়। এখানে বর্তমান বিশ্ব-সমস্যা সমূহের সর্ব প্রধানটির বাস্তবরূপ তুলিয়া ধরিতেছি। অনুরোধ করি, দয়া করিয়া ইহার যথার্থতা অনুধাবন করিতে মর্জি ফরমাইবেন।
এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, বর্তমান বিশ্ব-সমাজ ব্যবস্থার ক্ষুদ্রতম সমাজ (Unit) হইল ইউনিয়ন কাউন্সিল এবং বৃহত্তম সমাজ হইল জাতিসংঘ। প্রতি সমাজেই এক এক জন সমাজপতি বা চালক আছেন এবং সকল সমাজপতিই বিশ্ব-মানবের ঐক্য প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী এবং ইহারই ফল শ্রুতিতে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর হইয়াছে। অথচ সমাজপতিগণের মধ্যে বর্তমানে এমন একটি প্রধান বিষয়ে জটিল মতানৈক্য রহিয়াছে যাহার সুষ্ঠু মীমাংসা করিতে পারিলেই বিশ্ব মানব নিশ্চিত শান্তির জীবন লাভ করিতে পারিবে বলিয়া আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পক্ষান্তরে উহার মীমাংসা করিতে শৈথিল্য করিলে উক্ত মতানৈক্যের কুফল প্রত্যক্ষ লড়াইয়ের আগুনে পরিণত হইয়া বিশ্বমানব সভ্যতাকে পোড়াইয়া ছাইভষ্ম করিয়া দেওয়ারও নিশ্চিত সম্ভাবনা রহিয়াছে।
এখন জানা দরকার সেই সমস্যাটি কি? বিশ্বের একশ্রেণীর মানুষ বিশ্বাস করে যে এই বিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, মানুষ মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত হইবে। এই পৃথিবীর কাজের জন্য পরকালে বিচার হইবে, ভাল কাজের বিনিময়ে শান্তি ও মন্দ কাজের বিনিময়ে শাস্তি ভুগিতে হইবে ইত্যাদি। অপর শ্রেণীর মানুষ উপরোক্ত বিশ্বাসের ঘোর বিরোধী। তাহাদের বিশ্বাস, এই পৃথিবীর সব কিছুই প্রাকৃতিক নিয়মে সৃষ্টি ও লয় হয়। মানুষও তদ্রুপ। তবে মানুষ সাধনা ও পরিশ্রম করিয়া যে জ্ঞান অর্জন করে তাহা খাটাইয়া যে যত বেশী উন্নতি করিতে পারে, সে ততবেশী শান্তির জীবন যাপন করিতে পারে এবং ইহাই তাহার সৌভাগ্য। আর যে অলস, পরিশ্রম করিয়া জ্ঞান অর্জন করে না এবং কর্মের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করিতে চেষ্টা করে না, সে অশান্তির জীবন যাপন করে। ইহাই তাহার দুর্ভাগ্য। সুতরাং এই জগতই মানুষের কর্ম ও ফল ভোগের স্থান। পরকাল বলিতে কিছুই নাই।
বাবা, আমি অনুরোধ করি, বিরক্ত হইবেন না, আলোচ্য বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করিয়া দেখিবেন। উক্ত দুই বিপরীত বিশ্বাসে বিশ্বাসী মানুষ কি পৃথিবীর সর্বত্র দেখা যাইতেছে না? আর উক্ত দুই বিপরীত বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের মধ্যে প্রকৃত ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব গড়িয়া উঠা কি সম্ভবপর? না, তাহা কখনো হইতে পারে না। আর এ মতানৈক্যের মীমাংসা হওয়া যদিও একান্ত দরকার, তবুও তাহা হইতে পারিতেছে না, কেননা, উভয় পক্ষেই রহিয়াছে শক্তিশালী রাষ্ট্র নায়কগণ। আর যেহেতু দুই সমান শক্তিশালী ব্যক্তির মতানৈক্যের মীমাংসা তাহারা নিজেরা করিতে পারে না, যতক্ষণ উভয় পক্ষ অপেক্ষা অধিকতর ক্ষমতাশালী অপর এক তৃতীয় পক্ষ মীমাংসাকারক না হয়। অতএব এই সমস্যাটি সমাধানের জন্যই বিশ্ব প্রভুর ঐশ্বরিক মীমাংসা একান্ত প্রয়োজন।
এখানে একটি প্রশ্ন উঠিতে পারে যে, যাহারা স্রষ্টা বিশ্বাস করে না তাহারা আবার বিশ্ব প্রভুর মীমাংসা মানিবে কেন। তাহার উত্তর এই যে, সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীগণ অজ্ঞ বা পাগল নহেন। তাহাদের মধ্যে অনেক বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক আছেন। কিন্তু তাহারা যে কারণে স্রষ্টা মান্য করেন না তার মূলে রহিয়াছে স্রষ্টা মান্যকারীদের ধর্মমত ও পথ লইয়া মতানৈক্যজনিত ঝগড়া। এখানে আমি স্রষ্টা অমান্যকারীদের পক্ষে কিছু বলিতেছি। তাহাদের বক্তব্য হইল, “আমরা বিশ্বাস করিয়া, কর্ম ও কর্তা ধ্রুব সত্য। কর্তা ছাড়া কোন কর্ম হইতে পারে না। আমি একটি কর্ম বই কিছু নই, সুতরাং আমার একজন কর্তা অবশ্যই আছেন। একটু চিন্তা করিলেই বুঝা যায়, বিশ্বের মানুষ আমারই মত জাত, যেহেতু সকলেই পিতা-মাতার মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে, শৈশবকালে সকলেই চলার শক্তি, বলার শক্তি ও জ্ঞান শক্তি হইতে বঞ্চিত থাকে। সকল মানুষেরই একটি মাত্র মন আছে। সকলের মনই স্বাস্থ্য পছন্দ করে, রোগ ঘৃণা করে। সকল মানুষেরই পিপাসা আছে এবং পিপাসা নিবারণের জন্য একই বস্তু রহিয়াছে। সকল মানুষের মাথার উপর একটি মাত্র আকাশ, সকল মানুষেরই প্রয়োজন মিটাইবার জন্য একটি মাত্র সূর্য রহিয়াছে। অত্রএব সূর্যের মালিক যিনি, বিশ্বমানবের মালিকও তিনিই। সূর্য যখন একটি, সূর্যের মালিক কি একাধিক হইতে পারেন? তাহা কখনো হইতে পারে না। তাহা হইলে সেই বিশ্ব স্রষ্টার নৈকট্য লাভের জন্য তাঁহার মনোনীত সরল পথ একটিই হইবে একাধিক হইতে পারে না। কিন্তু আজ দেখা যায় শত শত আহবানকারী শত শত ধর্ম-মত ও পথে মানুষদিগকে আহবান করিতেছে এবং প্রত্যেক আহ্বানকারী নিজেকে সঠিক বলিয়া দাবী করিতেছে এবং অপর আহ্বানকারীকে ভ্রান্ত বলিয়া দোষারূপ করিতেছে। এমতাবস্থায় আমি কাহার পথ সঠিক বলিয়া বুঝিব এবং কাহার ডাকে সাড়া দিব? কাজেই আমি বিশ্বাস করি যে, এই ধর্মীয় মতানৈক্যের মীমাংসা হওয়া এই মুহূর্তে একান্ত প্রয়োজন অথচ ইহার মীমাংসার সুষ্ঠু ব্যবস্থা পৃথিবীর কোথাও দেখিতেছি না। ইহার সুষ্ঠু মীমাংসাকারক কোথাও আছেন বলিয়া যদি কেহ দাবী করেন, তাহা হইলে আমি জানিতে চাই, তিনি কোথায় আছেন এবং কিসের বলে তিনি মীমাংসা করিবেন? যদি বলা হয় যে, তিনি ধর্মশাস্ত্র দ্বারা মীমাংসা করিবেন, আমি বলিব তাহা কখনো হইতে পারে না। কেননা, আজিকার বিশ্বে এমন কোন ধর্মশাস্ত্র নাই, যে শাস্ত্র লইয়া উক্ত শাস্ত্র মান্যকারীদের মধ্যেই মতানৈক্য জনিত ঝগড়া না আছে।
বহু ধর্মের প্রসঙ্গ বাদ দিয়া শুধুমাত্র একটি বিশিষ্ট ধর্মের কথা ধরিলেও দেখা যাইবে যে, শাস্ত্র দ্বারা মতানৈক্যের কোন মীমাংসা হইতেছে না। প্রমাণ স্বরূপ বলা যায়, হিন্দু রাষ্ট্র বিদ্যমান থাকা সত্বেও হিন্দু শাস্ত্র দ্বারা হিন্দু ধর্মের মতানৈক্যের মীমাংসা হইতেছে না। তদ্রুপ মুসলিম রাষ্ট্রেও ইসলাম লইয়া যে মতানৈক্য কোরআন দ্বারা তাহার মীমাংসা সেখানে হইতেছে না ইত্যাদি। কাজেই আমি সরল ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমার অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন; আমি অন্তর আত্মা দিয়া সেই বিশ্ব প্রভুকে ডাকিয়া থাকি এবং তাঁহার মীমাংসাই যে বিশ্ব মানব জাতির একমাত্র শান্তির পথ, তাহা ছাড়া অন্য কোন পথ নাই ইহাতে আমি অটল বিশ্বাসী। কিন্তু তবু আমি একজন মহাপাপী, যেহেতু বর্তমান অবস্থায় কোন বিশ্ববাসীকেই অনুসরণ বা অনুকরণ করিয়া স্রষ্টা মান্য করিতে আমি অক্ষম।” এই হইল স্রষ্টা অমান্যকারীদের অভিযোগ। এই অভিযোগের প্রতিবাদে স্রষ্টা মান্যকারীদের পক্ষে কোন জবাব আছে কি?
বাবা, আমি বিশ্বাস করি যে, বিশ্বমানব জাতির শান্তি কায়েম করিবার জন্য বিশ্ব মানবের ঐক্য গড়িতে হইবে এবং বিশ্ব মানবজাতিকে এক নীতি অবলম্বন করিতে হইবে। আর সেই নীতি পাওয়ার জন্য বিশ্ব মানবজাতিকে বিশ্ব স্রষ্টার আসমানী মীমাংসার আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইবে। আর ইহাই হইল স্রষ্টা অমান্যকারীদের প্রতিবাদে স্রষ্টা মান্যকারীদের পক্ষ হইতে মোক্ষম জবাব।
বাবা, আসমানী মীমাংসা যেহেতু বিশ্ব-মানবের মঙ্গলের জন্য বিশ্ব-প্রভুর নিকট হইতে প্রদত্ত একটি মীমাংসা, সেহেতু বিশ্বমানব কেন্দ্র অর্থাৎ জাতিসংঘের মাধ্যমেই ইহার বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ কোন দেশ বা অঞ্চলে ইহা কার্যকর করিতে গেলে শান্তির বদলে অশান্তি বৃদ্ধি পাইবে। অবশ্য কোন একটি দেশকেই এই ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে। বাবা, যেহেতু আপনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব বহন করিতেছেন, সেহেতু এদেশেরই একজন নগণ্য নাগরিক হিসাবে আমি আপনাকে ব্যতীত আর কাহাকেই বা অনুরোধ করিতে পারি? সে যাহা হউক আসমানী মীমাংসা বাস্তবায়নের পরিকল্পনাটি সংক্ষেপে এখানে বর্ণনা করিতেছিঃ-
(১) স্থায়ী বিশ্ব-শান্তি কায়েম করার স্বার্থে জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রবর্গের ধর্মাবলন্বী ও বিভিন্ন মতবাদীগণের মধ্য হইতে প্রতিনিধিত্বকারী সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণকে লইয়া জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ হইতে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পেশ করা।
(২) এই সভায় অংশ গ্রহণকারী সকল প্রতিনিধিগণের জন্য নিম্নরূপে শপথ করার শর্ত আরোপ করা যথা, “আমি স্বীকার করিতেছি যে, আমাদের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। তিনিই আমাদিগকে অনস্তিত্ব হইতে অস্তিত্ববান করিয়াছেন। সুতরাং তাঁহার বাধ্যগত থাকা আমাদের জন্য মঙ্গল জনক। কাজেই তাঁহার মনোনীত পথে চলার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে যে মতানৈক্য ঘটিয়াছে উহার মীমাংসার জন্য আমরা তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি এবং তাঁহার পক্ষ হইতে যে ব্যক্তি আদেশ প্রাপ্ত হইয়াছেন বলিয়া দাবী করিবেন,আমরা বিনা দ্বিধায় তাঁহাকে মানিয়া লইব এবং তাঁহার পরামর্শ অনুসারে কাজ করিয়া বিশ্ব ঐক্য গড়িয়া তুলিব।”
(৩) সভায় প্রতিনিধিত্বকারীগণের প্রত্যেকের নিকট হইতে নিম্নবর্ণিত স্বীকারোক্তি লিখিতভাবে রাখার শর্ত ও থাকিবে, যথা-“সৃষ্টিকর্তার আদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি তিনি যে কোন দেশবাসী বা যে কোন মতবাদীই হউন না কেন তাঁহাকে গ্রহণ করিতে আমরা বাধ্য থাকিব, যেহেতু সৃষ্টিকর্তা যখন একজন তখন তিনি একজনকেই মীমাংসাকারক নিযুক্ত করিবেন।”
(৪) অতঃপর একটা সময়সীমা নির্ধারিত করিয়া উক্ত মেয়াদ পর্যন্ত সকল প্রচার যন্ত্রের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার আদেশ-প্রাপ্ত হওয়ার দাবীদার ব্যক্তি, তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, তাঁহাকে তাঁহার দাবী পেশ করিতে অনুরোধ করা। নির্ধারিত সময় পরে কেহ দাবী পেশ করিলে তাহা অগ্রাহ্য করা।
(৫) তারপর উক্ত দাবীদারের দাবীর সত্যতা প্রমাণের জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলি প্রয়োগ করা। যথাঃ
(ক) দাবীদারের বয়স ৪০ (চল্লিশ) বৎসরের কম হইবে না।
(খ) সৃষ্টিকর্তার পরিচয় দিতে হইবে।
(গ) উক্ত প্রত্যাদেশ অন্তত ১২ (বার) বৎসর পূর্ব হইতে পাইয়া থাকিবেন এবং এই সময়ের মধ্যে কি কি কালচার করিয়া আসিয়াছেন তাহা দেখাইতে হইবে।
(ঘ) প্রত্যাদেশ প্রাপ্তির পূর্ব হইতে তাঁহার উপর কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটিয়াছে কি না তাহা জানাইতে হইবে?
(ঙ) তাঁহার ঘনিষ্ঠ পরিচিত লোকদের মধ্যে তাঁহাকে সত্যবাদী, চরিত্রবান ও বুদ্ধিমান বলিয়া পরিচিত হইতে হইবে।
উক্ত লক্ষণ বিশিষ্ট মানুষই স্রষ্টার পক্ষ হইতে মনোনীত মীমাংসাকারক বলিয়া গণ্য হইবেন, যেহেতু উক্ত লক্ষণযুক্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার বিশেষ দয়া ছাড়া কেহ সাধনার বলে হইতে পারেন না।
বাবা, জাতিসংঘের বর্তমান কাঠামোতে এবং বিশ্বের রাষ্ট্র সমূহের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মাধ্যমে উল্লিখিত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে নানান জটিলতা, অসম্ভাব্যতা ও অগ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন উত্থিত হওয়ার সকল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আসমানী মীমাংসার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করা এবং তাহা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিটি মানুষেরই কর্তব্য বলিয়া আমি মনে করি এবং রাষ্ট্রপতি হিসাবে আপনার দায়িত্ব সর্বাধিক কেননা, এ দেশবাসী সকলের মঙ্গল- অমঙ্গলের বিষয় চিন্তা ভাবনা করার দায়িত্ব আপনার উপরই ন্যস্ত। সুতরাং এদেশ ও দেশবাসীর কল্যাণার্থে এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সকল প্রকার উদ্যোগ আয়োজন করা সর্ব প্রম আপনারই কর্তব্য বলিয়া আমি মনে করি। আমি ত সংবাদ পৌঁছাইবার জন্য একজন দাস মাত্র।
বাবা, এখন আমি সেই বিশ্ব প্রভুর উপর ভরসা করিয়া পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করিতেছি যে, যদি উপরোল্লিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহা হইলে প্রভুর দয়ায় সেই মানুষ অবশ্যই পাওয়া যাইবে এবং তাঁহার মীমাংসা গ্রহণ করা হইলে পৃথিবীতে অবশ্যই শান্তি কায়েম হইবে। আর ইহাই আসমানী মীমাংসা।
বাবা, আমি সেই মালিকের উপর ভরসা করিয়া ইহাও ঘোষণা করিতেছি যে, যদি উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে মতানৈক্য জনিত ঝগড়ার দরুন জগদ্বাসী অবশ্যই ধ্বংস হইবে।
বাবা, আমার মনের দুঃখ অকপটে আপনার হুজুরে পেশ করিলাম। এখন ইহা কার্যকরী করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা বা না করা আপনার ইচ্ছাধীন। এই ব্যাপারে যদি বিস্তারিত কিছু আলোচনা করার প্রয়োজন অনুভব করেন, তাহা হইলে, অনুমতি দিলে এই নগণ্য দাস আপনার খেদমতে হাজির হইতে আগ্রহী।অ আখেরে দাওয়ানা আনেল হামদু লিল্লাহে রাব্বিল আলামিন।
********************