পরম দয়াময় সৃষ্টিকর্তার নামে আরম্ভ করিতেছি

বিশ্ব মানব জাতির খাঁটি শান্তি প্রতিষ্ঠার অদ্বিতীয় পন্থা

(একজন বৈজ্ঞানিক ও একজন মুসলমান ধর্মগুরুর মধ্যে নেপথ্য সংলাপ)
বৈজ্ঞানিক : হুজুর! আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে খাঁটি শান্তি কায়েম করিতে চাহিলে আমাদের মধ্যে একতা গঠন করিতে হইবে। আর একতা গঠন করিতে হইলে আমাদের মতানৈক্যের একটা সুষ্ঠু মীমাংসা করিয়া আমাদিগকে এক মতবাদী হইতে হইবে। হুজুর! আপনি কি আমার এই বিশ্বাসটি সমর্থন করেন?
মুসলমান : ধর্মগুরু: ইহা সমর্থন করিব না কেন? আপনি একজন বৈজ্ঞানিক। আপনার অভিজ্ঞতা হইতে ইহা বুঝিতে পারিয়াছেন। আর আমি বুঝিয়াছি আল্লাহর বাণী দ্বারা। যেহেতু আল্লাহ্ স্বয়ং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হইয়া থাকিতে নির্দেশ দিয়াছেন।
১ম ব্যক্তি : আপনার কথা শুনিয়া খুব খুশী হইলাম। তাহা হইলে আশা করি, আপনি ও আমি ঐকমত্য হইয়া চলিলে অনায়াসে আমরা মানুষকে আমাদের মতের দিকে আকৃষ্ট করিতে পারিব। কিন্তু কথা এই যে, সর্ব প্রথম আমাদের দুই জনের মধ্যেই খাঁটি একতা গঠন করিতে হইবে এবং সেই জন্য আমাদিগকে এক মতবাদী হইতে হইবে। তাহা না হইলে আমাদের সারা জীবনের চিল্লা-চিল্লিতেও কেহ কর্ণপাত করিবে না। এইবার আসুন আমাদের মতানৈক্যের প্রধান বিষয়টি একবার চিন্তা করিয়া দেখি। আপনি ধর্ম বিশ্বাস করেন, কিন্তু আমি কোন ধর্ম বিশ্বাস করি না। যদি আমরা একতা গঠন করিতে চাই, তাহা হইলে আমাদের সর্ব প্রথম কর্তব্য হইবে আমাদের দুইজনের একজনের মত বিসর্জন দিয়া অপর জনের মত বলবৎ রাখা। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ইহার বিকল্প আর কোন পন্থাই নাই। হুজুর, আমার এই বিশ্বাসটি কি সঠিক বলিয়া সমর্থন করেন?
২য় ব্যক্তি : কেন সমর্থন করিব না? ইহা ত জ্ঞানেরই কথা, ইহা কখনও অঠিক হইতে পারে না।
১ম ব্যক্তি : আপনার কথায় আমি আরও আনন্দিত হইলাম। হুজুর! তাহা হইলে আসুন, আর কাল বিলম্ব না করিয়া এখনই আপোষ করিয়া ফেলি। এখন বলুন কাহার মত বিসর্জন দিতে হইবে, আর কাহার মত বহাল রাখিতে হইবে?
২য় ব্যক্তি : কেন? আপনি নিজের মত ত্যাগ করতঃ আমার ধর্ম পথ গ্রহণ করুন। কেননা, ধর্মই এক মাত্র শান্তির পথ।
১ম ব্যক্তি : হুজুর! ধর্ম বিষয়ে আমার বিশেষ জ্ঞান নাই। তাই সর্বপ্রথম জানিতে চাই, ধর্ম কি এবং কেন পালন করিতে হইবে।
২য় ব্যক্তি : তাহা হইলে শুনুন। ক্রিয়া, কর্ম ও কর্তা Ñ ইহা ত বুঝেন? সুতরাং যাহা সৃষ্ট তাহার স্রষ্টা আছে Ñ ইহা মানিতেই হইবে। কাজেই মানুষের স্রষ্টা বিশ্বাস করা ও তাঁহার ইচ্ছানুযায়ী চলার নামই ধর্ম। সুতরাং ধর্ম পথই অভ্রান্ত এবং শান্তির পথ। ধর্মবিশ্বাসহীন মতই ভ্রান্ত পথ। তাই, আপনার মত বিসর্জন দিয়া আমার সঙ্গে ধর্ম পথে ঐক্য গড়িতে হইবে।
১ম ব্যক্তি : হুজুর! আমার বিজ্ঞান মতে একটি ধারা আছে। তাহা এই যে, কোন বিষয় ভালভাবে না বুঝিয়া কাজ করা নিষিদ্ধ। যাহা হউক আপনি বিরক্ত হইবেন না। আমি জানিতে চাই, স্রষ্টা কি একজনই না বহুজন?
২য় ব্যক্তি : (ঈষৎ রাগান্বিত হইয়া) আপনি একজন বৈজ্ঞানিক হইয়াও সমান্য কথাটা বুঝিতেছেন না কেন? দেখুন, এক রাষ্ট্রে একাধিক রাজা থাকিতে পারে না। তাহা হইলে স্রষ্টা একাধিক কী করিয়া হইতে পারে?
১ম ব্যক্তি : হুজুর! ক্ষমা করিবেন, আপনাকে একটু রাগান্বিত মনে হইতেছে। কিন্তু আমাদের বৈজ্ঞানিক মতে আলোচনাস্থলে হঠাৎ রাগান্বিত হওয়া ব্যর্থতারই লক্ষণ। ধীরস্থির ভাবে বিপক্ষের কথা শোনা, চিন্তা Ñ ভাবনা করা এবং যুক্তি সঙ্গত হইলে বিপক্ষের মত সমর্থন করাÑইহাই হইল জ্ঞানীর পরিচয়। যাহা হউক, আমার আরও কিছু জানার আছে। তাহা এই যে, স্রষ্টা যখন একজনই, তাহা হইলে পৃথিবীতে ধর্ম মাত্র একটাই থাকা উচিৎ; কিন্তু আজিকার পৃথিবীতে বহু ধর্মমত প্রচলিত কেন? এবং ধার্মিকদের মধ্যে এত মতানৈক্য ও এত ঝগড়া কেন?
২য় ব্যক্তি : হ্যাঁ, শুনুন। পৃথিবীতে খাঁটি ধর্ম মাত্র একটাই। বাকী সবই বাতেল। এইবার খাঁটি ও বাতেল ধর্মের পূর্ণ ব্যাখ্যা অবগত হউন।
এই পৃথিবীতে শান্তিতে জীবন যাপন করিতে হইলে মানুষকে একতাবদ্ধ হইয়া থাকিতে হয়। আর একতা গঠন করা ও কায়েম রাখিবার জন্য একজন নেতারও দরকার হয়। কাজেই জগতে যখন ভিন্ন ভিন্ন দলের উদ্ভব হয় এবং দলের নেতৃবৃন্দ যখন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন সাধারণ মানুষের জীবন হয় অশান্তিপূর্ণ। আর এই অশান্তি হইতে পুনরুদ্ধারের জন্য সৃষ্টিকর্তা একজন মানুষকে মনোনীত বা নির্বাচিত করিয়া থাকেন। স্রষ্টার এই মনোনীত ব্যক্তিই হন ‘মহাপুরুষ’; তিনিই আল্লাহর ‘খাস’ বান্দারূপে (নবী, রাছুল) পরিচিত হন। যখন এই মহাপুরুষ মানুষকে তাহার আনুগত্য স্বীকার করতঃ তাহার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আল্লাহর পক্ষ হইতে আহ্বান করেন, তখন তাহার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাহার অনুগত হইয়া চলার নামই ধর্ম। আর যাহারা তাহার মতের বাহিরে থাকে তাহারা হয় বাতেল। যতদিন উক্ত মনোনীত ব্যক্তির অনুসারীদের মধ্যে খাঁটি একতা কায়েম থাকে, ততদিন উহাই খাঁটি ধর্ম। কিন্তু যখন তাহার অনুসারীদের মধ্যেই ঐক্য ভাঙ্গিয়া যায় এবং তাহারা শান্তি হারাইয়া ফেলে, তখন আল্লাহ আবার একজন মহাপুরুষ প্রেরণ করেন, আর তাহার পূর্বের ধর্ম বাতেল হইয়া যায়। এমনি ভাবেই পৃথিবীতে লক্ষাধিক মহাপুরুষ আসিয়াছেন এবং তাহাদের পূর্বের ধর্মকে বাতেল করিয়া দিয়াছেন। অবশেষে আমাদের নবী হজরত মোহাম্মদ (দঃ)কে প্রেরণ করিয়া পূর্বের সমস্ত ধর্ম-মত ও পথকে বাতেল করিয়া দিয়াছেন। কাজেই বর্তমান পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র খাঁটি ধর্ম, বাদবাকী যত ধর্ম বা মত আছে, তাহা সমস্তই বাতেল। ইহা স্বয়ং আল্লাহ পাকই বলিয়াছেন, যেমনÑ “ইন্নাদ্বিনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম”। অতএব দুনিয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইহাই খাঁটি ধর্ম, ইহার বাহিরে আর কোন ধর্ম নাই। আর যেহেতু আমি সেই খাঁটি ধর্মের অনুসারী, সেহেতু আপনাকে আপনার মত ত্যাগ করতঃ আমার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হইতে বলিতেছি।
১ম ব্যক্তি : হুজুর! আপনার দীর্ঘ আলোচনা হইতে আমি যাহা বুঝিয়াছি, তাহা ব্যক্ত করিতে চাই। আশা করি ধৈর্যসহকারে আমার কথাগুলি শুনিবেন ও বিবেচনা করিয়া দেখিবেন।
আমি বুঝিতে পারিলাম যে, ধর্ম পালন করিলে আল্লাহর কোন লাভ হয় না বা ধর্ম ত্যাগ করিলে আল্লাহর কোন ক্ষতিও হয় না; তবে মানব জাতির মহা উপকারের জন্যই ধর্ম পালন করিতে হয়। কেননা, যে যুগে পৃথিবীবাসী মতানৈক্যজনিত কোন্দলে লিপ্ত হয় বিশেষভাবে কোন মহাপুরুষের অনুসারীগণও যখন ঐক্য বজায় রাখিতে ব্যর্থ হয়, তখনই দয়াময় সৃষ্টিকর্তা পুনরায় দয়াপরবশ হইয়া আবার একজন মহাপুরুষ প্রেরণ করেন, ইহা যে তাঁহার কত বড় দয়া, তাহা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
সে যাহা হউক, সাধারণতঃ কোন নেতা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করিতে চাহিলে প্রথমতঃ তাহাকে তাহার নিজের যোগ্যতা প্রদর্শন করিতে হয়। আর পৃথিবীতে কেহই জ্ঞানে-গুণে অদ্বিতীয় হইতে পারে না। আবার কোন গুণধর ব্যক্তি তাহার সমকক্ষ অপর কোন গুণধর ব্যক্তির পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করিতে পারে না। কাজেই সাধারণ নেতার দ্বারা পূর্ণ একতা কায়েম হইতেই পারে না। বিশেষ করিয়া ধর্মাবলম্বীগণের পক্ষে ত মোটেও সম্ভব নয়। কারণ, তাহারা ত স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টির অনুগত হইতেই পারে না, এরূপ করাকে তাহারা দ্বিত্ববাদ (শেরেক) বলে। কাজেই এমনি বিপদ কালে সেই রহমান তাঁহার রহমত বর্ষণ না করিলে যে তাঁহার সৃষ্ট দাসগণ ধ্বংস হইয়া যাইত!
আরও, স্রষ্টার পক্ষ হইতে মনোনীত মহাপুরুষের আনুগত্য প্রকারান্তরে উহা স্রষ্টারই আনুগত্য। আর স্রষ্টা যেহেতু অসীম জ্ঞান, গুণ ও শক্তির অধিকারী। তাই সৃষ্টিকর্তার খাতিরে তাঁহার প্রেরিত পুরুষের আনুগত্য করিতে কাহারও আপত্তি থাকিতে পারে না; বিশেষ ভাবে ধর্মাবলম্বীগণের পক্ষে ত মোটেও আপত্তি থাকিতে পারে না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আল্লাহর প্রেরিত পুরুষদিগকে কিতাবধারী ধার্মিকগণ কিভাবে অমান্য করে? যেমন, মোহাম্মদ (দঃ)কে খ্র্ষ্টিানগণ মানে না; যীশুখ্রিষ্ট একজন প্রেরিত মহাপুরুষ হওয়া সত্ত্বেও ইহুদীগণ তাঁহাকে মানে না। বাস্তবিকই ইহা আফসোসের বিষয়।
২য় ব্যক্তি : আপনি যে সত্য উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন, সেইজন্য আপনাকে মোবারকবাদ। হ্যাঁ, ইহা আফসোসেরই বিষয়। স্বয়ং আল্লাহ-পাকও তাহাদের প্রতি আফসোস প্রকাশ করিয়াছেন।
১ম ব্যক্তি : যাহা হউক, পূর্বকাল বাদ দিয়া আসুন আমরা বর্তমান সময়ের বিষয় লইয়া চিন্তা করি। হুজুর! আপনি নিজেই বলিয়াছেন যে, যখন মানব জাতির মধ্যে মতানৈক্যÑজনিত কঠিন সমস্যা দেখা দেয় এবং যাহার সমাধান করার ক্ষমতা কোন মানুষের হাতে থাকে না, ঠিক তেমনি সময় আল্লাহ একজন মহাপুরুষ প্রেরণ করেন। ইহাই লক্ষ লক্ষ মহাপুরুষের আবির্ভাবের একমাত্র কারণ। তাহা হইলে দেখা যায়, এই যুগেও তেমনি কঠিন সমস্যা দেখা দিয়াছে এবং এখনও একজন মহাপুরুষের আবির্ভাবের একান্ত প্রয়োজন। তার প্রমাণ, মোহাম্মদ (দঃ) মানব জাতির সকল সম্প্রদায়কেই ডাকিয়া ছিলেন, সর্ব মতের মধ্য হইতে যাহারা তাঁহার অনুগত হইয়াছিলেন, তাহাদের সমষ্টিই হইল মোসলেম জাতি এবং এই জাতিই খাঁটি ধার্মিক ও মুক্তির অধিকারী। আর যে কোন ধর্মের বা মতের মানুষ আপন মত ত্যাগ করতঃ ইসলাম গ্রহণ করিবে সে-ই খাঁটি ধার্মিক ও মুক্তির অধিকারী হইতে পারে। ইহা খুবই সরল পথ। কিন্তু বর্তমান ইসলামে কি বিশ্ব মোসলেম এক মতবাদী হইয়া আছেন?
এইবার একটু ধৈর্য সহকারে শুনুন, কেন আমি বলিয়াছি যে, ধর্ম বিশ্বাস করি না। আমি একজন বৈজ্ঞানিক। বিজ্ঞানের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রও বুঝিতে পারে যে, কর্তা ছাড়া কোন কর্ম হয় না; আর আমি কি উহা বুঝি না। তবে খাঁটি ধর্ম কোথায় আছে, আর আমি কাহার সঙ্গে মত মিলাইয়া চলিব?
হুজুর! আরও শুনুন, আপনাদের এক আল্লাহ, এক রাছুল, এক কোরান? অথচ আপনারা শিয়া ও সুন্নি Ñ দুই মতবাদী। বাদ দিলাম শিয়া প্রসঙ্গ। ধরিলাম, আপনি একজন খাঁটি সুন্নি। এখানেও আপনি হানাফী, শাফী প্রভৃতি চারি মতবাদী। বাদ দিলাম অন্য সব মাজহাব প্রসঙ্গ। ধরিলাম আপনি একজন হানাফী। এখানেও আপনি চিশতিয়া, কাদরিয়া, নক্শ্বন্দী প্রভৃতি চারি মতবাদী। বাদ দিলাম ফেরকা প্রসঙ্গ। আপনি একজন কোরানধারী খাঁটি কিতাবী, কিন্তু আপনারা কোরান-হাদিস দ্বারা যে কর্মকা- করিতেছেন, তার কিছু নমুনা দেখাইতেছি।
বিখ্যাত দেওবন্দ মাদ্রাসা খাঁটি ইসলামী শিক্ষাগার। তথাকার প্রধান শিক্ষক মোহ্তামিম মওলানা হুসেইন আহামেদ মদনী এবং অপর একজন বিখ্যাত আলেম মওলানা আবুল কালাম আজাদ। তাঁহারা কোরান-হাদিসের আলোতে রায় দিলেন, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র মোসলেম লীগ কোরান ও সুন্নাহ্র বিরোধী। এই কারণে অধিকাংশ আলেমই জিন্নাহ্ সাহেবের মতের বিরুদ্ধে মুখর ছিলেন। কিন্তু যখন জিন্নাহ্ সাহেব জয়যুক্ত হইলেন, তখন উক্ত দুই আলেম হিন্দুস্তানে আপন মতে বহাল রহিলেন। আর পাকিস্তানের হুজুররা কোরান-হাদিস দ্বারা প্রমাণ করিতে লাগিলেন যে, মোসলেম লীগ কোরান বিরোধী নয় বরং কেরান ও সুন্নাহ্রই সার-নির্যাস।
তারপর আইউব খান ও মিস্ ফাতেমা জিন্নাহ্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাকালে দশ জন বিশিষ্ট আলেমসহ শর্ষিনার পীর সাহেব ফতোয়া দিলেন যে, ইসলামী রাষ্ট্রে কোন মেয়ে লোক রাষ্ট্র প্রধান হইতে পারে না। ইহা কোরান ও সুন্নাহ্ বিরোধী। কিন্তু বিখ্যাত আলেম মওলানা মওদুদী উক্ত ফতোয়ার উত্তরে বলিলেন যে, শর্ষিনার পীর সাহেব এবং তাহার সঙ্গীরা কোন আলেমই নহে, বরং তারা ঘুষখোর।
তারপর পাকিস্তানি শাসনের শেষের দিকে যখন আওয়ামী লীগের জোর প্রচার শুরু হইল, তখন আলেমগণ প্রকাশ্য সভায় প্রচার করিতে লাগিলেন, শেখ মুজিব নামে মাত্র মুসলমান। তাহার বিশ্বাস সম্পূর্ণ কোরান-হাদিস বিরোধী। খবরদার! কোন মুসলমান যেন তাহার মতে যোগদান না করে … ইত্যাদি। কিন্তু শেখ মুজিব যখন জয়যুক্ত হইলেন, তখন এক শ্রেণীর হুজুররাই বলিতে লাগিলেন, “ইহাই নূহ্ নবীর কিস্তি”, ‘শেখ মুজিব জামানার কুতুব’, ‘ইমাম মাহদী’ ইত্যাদি।
তারপর হালজামানা-বর্তমান বাংলাদেশের বিখ্যাত আলেম আটরশির পীর সাহেব মোজাদ্দেদে জামান। তাহার পার্শ্বেই হাফেজ্জী হুজুর খেলাফত আন্দোলনের অগ্রনায়ক-আমীরে শরীয়ত। তাহাদের পার্শ্বেই চলিতেছে তাবলীগ জামাতের প্রচার। এখানে আমার প্রশ্ন হইলঃ উপরোক্ত তিনিট দল কি ইসলাম ধর্ম ও মোসলেম জাতির মধ্যে নহে? আর তাহাদের মধ্যে কেহ কি কোরান-হাদিসে অনভিজ্ঞ? তাহা হইলে, এই তিন দল একতাবদ্ধ হইতেছে না কেন? হাফেজ্জী হুজুর ও তাবলীগিরা কি আটরশির হুজুরের আনুগত্য স্বীকার করিতে পারিবেন? বা আটরশি ও হাফেজ্জী কি তাবলীগে আত্মসমর্পন করিতে পারিবেন? Ñ না এইরূপ কেহই করিতে পারিবেন না। কারণ? কারণ, একটাই, অর্থাৎ তাঁহারা কেহই কাহারও চাইতে জ্ঞানে-গুণে কম নহেন। কাজেই একজন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি তাহার সমতূল্য অপর এক জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে নতি স্বীকার করিতে লজ্জাবোধ করেন। পক্ষান্তরে, সকলেই শিক্ষাগত জ্ঞান লইয়া কোরান-হাদিসের আলোতে যিনি যেরূপ বুঝিয়াছেন, উহাকে অভ্রান্ত খাঁটি শান্তির পথ মনে করিতেছেন; কিন্তু তাহারা কেহই পৃথিবীর এই ক্ষুদ্রাংশের সামান্য তিনটি দলের মতানৈক্যেরই মীমাংসা করিয়া ঐক্যবদ্ধ হইয়া একটা আদর্শ দেখাইতে পারিতেছেন না। বরং সাধারণ মোসলমানদিগকে তাহারা তিন জন তিন দিকে ডাকিয়া তিন দলে বিভক্ত করিতেছেন। আর এই হুজুররাই কি পারিবেন সারা বিশ্ববাসীকে এক মতে ঐক্যবদ্ধ করিতে?
অতএব হুজুর! আমি অনুরোধ করিতেছি, আপনার কিতাবী এলেমের দাম্ভিকতা না দেখাইয়া বরং আসুন, আমার ও আপনার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করি এবং দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করি যে, তিনি যাহাকে মনোনীত করিয়া পাঠাইবেন, আমরা সেই মহাপুরুষের আনুগত্য করিব এবং তাহার সঙ্গে আমরা এক মতবাদী হইয়া কাজ করিব। ইহাই যুক্তি ও জ্ঞানের কথা এবং ইহাই শান্তির একমাত্র পথ। আমি চ্যালেঞ্জ করিয়া বলিতেছি যে, পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার ইহাই এক মাত্র পন্থা। ইহা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পন্থাই নাই।

********